ঢাকা, ৬ মে ২০২৫: কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে ওরিয়ন গ্রুপের ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিডব্লিউজিইডি) এবং কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন)। সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলা), ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এফইডি), মহেশখালী জনসুরক্ষা মঞ্চ এবং সংশপ্তক।
দাবিসমূহ:
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর দাবির মধ্যে রয়েছে: ওরিয়ন মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (ইআইএ) বাতিল করা। ২০১৩ সালের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) চুক্তি বাতিল করা। ওরিয়ন পাওয়ারকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে প্রদত্ত ১০,৫৭৯ কোটি টাকার ঋণ বাতিল করা। কয়লা প্রকল্পের ইজারা বাতিল করে নবায়নযোগ্য সৌর ও বায়ু প্রকল্প গ্রহণ করা। জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বন্ধ ঘোষণা করা।
বিডব্লিউজিইডির সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, “বিতর্কিত আইনের আওতায় পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি সম্পূর্ণ অবৈধ। এটি বাস্তবায়িত হলে জনগণের ওপর বছরে ৩,০৫৯ কোটি টাকার ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা চাপবে।” তিনি জানান, ২০১৩ সালে তৎকালীন সরকার মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দিলেও, ওরিয়ন গ্রুপ নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হয়। পরে ২০২২ সালে প্রকল্পটি মাতারবাড়িতে স্থানান্তর করা হয় এবং মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
হাসান মেহেদী আরও বলেন, “এই প্রকল্প ২০২৬ সালের মধ্যে নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এটি চালু হলে ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে। স্থান পরিবর্তনের কারণে ভূমি ইজারা ও জ্বালানি পরিবহণ খরচ কম হওয়া উচিত, তাই বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (পিপিএ) বাতিল করা প্রয়োজন।”
গত ৪ মে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গণস্বাক্ষরসহ একটি গণআবেদন জমা দেওয়া হয়। এছাড়া, দেশের ১৪৪টি নাগরিক সংগঠন অর্থ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সিপিজিসিবিএল-এর কাছে চারটি পৃথক আবেদনপত্র জমা দিয়েছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের আহসান এইচ মনসুর এই প্রকল্পে দেওয়া ১০,৫৭৯ কোটি টাকার ঋণের বিরোধিতা করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের পক্ষে মত দিয়েছেন। যদিও ২০২৪ সালে একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের ঋণ বাতিল করা হয়েছে, কয়লা প্রকল্পের ঋণ এখনো বহাল রয়েছে।
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো পরিবেশ, জলবায়ু, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে এই প্রকল্প বাতিলের জোর দাবি জানিয়েছে।
এ.আই/এম.আর