কক্সবাজার: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির (এএ) ব্যাপক নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন রোহিঙ্গারা। এর ফলে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নতুন আগমনকারীদের ভিড় বাড়ছে। অনেকে দাবি করছেন, আরাকান আর্মির নির্যাতন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চেয়েও ভয়াবহ।
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীর ৫ নম্বর ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, রাখাইনের মংডুর বুড়া সিকদারপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। এপ্রিল থেকে অনেকে পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। বুড়া সিকদারপাড়া থেকে কমপক্ষে ৬০ জনকে নির্যাতন ও গুলিবর্ষণের মাধ্যমে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ আলী নামে একজন রোহিঙ্গা জানান, তার গ্রামের সব বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার পর তিনি সারারাত পালিয়ে বেড়ান। পরদিন আরাকান আর্মি তাদের খুঁজে বের করে নির্যাতন শুরু করে। তার স্ত্রী বলেন, এএ তাদের জিম্মি করে রাখে, এবং কয়েকদিন লুকিয়ে থেকে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।
অন্যান্য রোহিঙ্গারা জানান, আরাকান আর্মি তরুণ-তরুণীদের জিম্মি করে দাস-দাসীর মতো ব্যবহার করছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে এবং কাউকে কাউকে নির্মাণকাজে বাধ্য করছে। একজন যুবক বলেন, এএ তাকে নির্যাতন করেছে এবং তার এক স্বজনকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। আরেকজন জানান, কিশোর-তরুণদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে এএ, এবং তাদের কথা না শুনলে চরম অত্যাচার করছে।
স্থানীয় তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গত বছরের মে ও জুন মাসে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা এসেছে। রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি, প্রতিদিন ৫০০-এর বেশি মানুষ আসছে। নতুন আগমনকারীদের অন্যের ঘরে জায়গা দেওয়া হচ্ছে।
একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, আরাকান আর্মি ঘোষণা দিয়েছে যে রাখাইনে রোহিঙ্গা বলে কোনো জাতি থাকতে পারবে না। এটি গণহত্যার লক্ষণ। এছাড়া, এএ রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে মাদক ও পণ্য চোরাচালান করাচ্ছে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ সতর্ক। র্যাব-১৫ কক্সবাজারের লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান বলেন, মিয়ানমারে পণ্য চোরাচালান ও মাদকের সিন্ডিকেট নিয়ে তারা কাজ করছেন। টেকনাফের ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, সীমান্তে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
রোহিঙ্গা আগমন অব্যাহত থাকলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। টেকনাফের মিয়ানমার সীমান্তে গ্রাম-মহল্লা পোড়ানো এবং এএ-এর মাদক চোরাচালানে জড়িত থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এ.আই/এম.আর