আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ৪ মে ২০২৫: ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রোববার সকালে ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়নে আঘাত হানে। এই হামলার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমান সংস্থা তেল আবিবে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১৮ মিনিটের দিকে ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি শনাক্ত করা হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাইরেন বাজিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়। ইসরায়েলের অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যার মধ্যে অ্যারো এবং মার্কিন টিএইচএএডি সিস্টেম রয়েছে, তা ফাঁকি দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রটি বিমানবন্দরের ৩ নম্বর টার্মিনালের কাছে আঘাত হানে। ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা মেগান ডেভিড অ্যাডাম (এমডিএ) জানায়, এতে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন।
হামলার পর বিমানবন্দরে সব ধরনের উড্ডয়ন ও অবতরণ প্রায় এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ ছিল। পরে ইসরায়েল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে। তবে এই ঘটনার জেরে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ৭ মে পর্যন্ত তেল আবিবে সব ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। ভারতের এয়ার ইন্ডিয়াও ৬ মে পর্যন্ত তাদের ফ্লাইট স্থগিত করেছে। এক বিবৃতিতে এয়ার ইন্ডিয়া জানায়, যাত্রী ও কর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং আগামী ৪ থেকে ৬ মে পর্যন্ত বুকিং থাকা যাত্রীদের জন্য ফ্লাইট পুনঃনির্ধারণ বা ফেরতের সুবিধা দেওয়া হবে।
জার্মানির লুফথানসা এয়ারলাইন্স এবং এর অধীনস্থ ইউরোইউংস, সুইস, অস্ট্রিয়ান এবং ব্রাসেলস এয়ারলাইন্সও ৬ মে পর্যন্ত তেল আবিবে ফ্লাইট বাতিল করেছে। এছাড়া, এয়ার ইউরোপার মতো অন্যান্য বিমান সংস্থাও ইসরায়েলে ফ্লাইট স্থগিত করেছে।
হুথি বিদ্রোহীদের সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি এক টেলিভিশন বিবৃতিতে হামলার দায় স্বীকার করে বলেন, এটি একটি “হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র” যা ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষমতা প্রমাণ করে। তিনি বিমান সংস্থাগুলোকে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা না করার সতর্কতাও জারি করেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ কঠোর প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যারা আমাদের ক্ষতি করবে, আমরা তাদের সাত গুণ বেশি আঘাত করব।” ইসরায়েলের জাতীয় ঐক্য দলের চেয়ারম্যান বেনি গানৎজ এই হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে বলেন, “এটি ইয়েমেন নয়, এটি ইরান।”
গাজায় চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে হুথিরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এ ধরনের হামলা চালিয়ে আসছে। এই ঘটনা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকে আরও তীব্র করেছে।
এ আই/এম.আর