Tuesday, May 6, 2025

রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে স্বস্তিতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

ঢাকা, ৬ মে ২০২৫ – রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ক্রমবর্ধমান প্রবাহের ফলে আমদানি বিল পরিশোধের পরও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গ্রহণযোগ্য ও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, মঙ্গলবার (৬ মে) এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ ও এপ্রিল মাসের আমদানি বিল বাবদ ১.৮৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১৮৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার) পরিশোধ করা হয়েছে। এই পরিশোধের পরও প্রকৃত রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের উপরে এবং মোট বা গ্রস রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, “আজ আকুর বিল হিসেবে ১.৮৮৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হচ্ছে। তবুও রিজার্ভে বড় ধরনের চাপ পড়েনি। বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় এখন গ্রহণযোগ্য ও স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। এর পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে প্রবাসীদের অব্যাহত রেমিট্যান্স প্রেরণ এবং রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক প্রবণতা।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২ সালের আগস্টে দেশের রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। তবে, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থনে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ব্যাপক অর্থ পাচার শুরু করলে রিজার্ভে সংকট দেখা দেয়। ২০২৪ সালের জুলাই শেষে রিজার্ভ কমে ২০.৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। সরকার পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে এবং অর্থপাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়। ফলে ৩৭০ কোটি ডলারের মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া পরিশোধের পরও রিজার্ভ গ্রহণযোগ্য অবস্থায় রয়েছে।
৪ মে ২০২৫ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে মোট রিজার্ভ ছিল ২৭.৩৫ বিলিয়ন ডলার, আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ২১.৯৭ বিলিয়ন ডলার।
আকু কী?
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু) হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের মধ্যে আমদানি-রপ্তানির দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের তেহরানে এর সদর দপ্তর অবস্থিত। সদস্য দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাসে আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। তবে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কার সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে।
রপ্তানির ইতিবাচক ধারা
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দেশের রপ্তানি খাত ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রপ্তানি আয় হয়েছে ৪০.২১ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৯.৮৩% বেশি।
রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থপাচার রোধে কঠোর নীতির ফলে হুন্ডিসহ অবৈধ চ্যানেলে অর্থ প্রেরවিষয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৭৫.২০ কোটি মার্কিন ডলার (৩৩,৫৭৪ কোটি টাকা, প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) রেমিট্যান্স এসেছে, যা একক মাস হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলার এসেছিল ২০২৫ সালের মার্চে, এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৬৪ কোটি ডলার এসেছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রবাসীরা মোট ২৪.৫৪ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৮.৩% বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, অর্থপাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপের ফলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ.আই/এম.আর

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.