ইরানের পবিত্র কুম শহরে অবস্থিত জামকারান মসজিদের চূড়ায় ‘প্রতিশোধের লাল পতাকা’ উত্তোলন করা হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ফার্স নিউজের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, শিয়া মুসলমানদের পবিত্র এই মসজিদের গম্বুজে লাল পতাকা উড়ছে। এই পতাকা শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে প্রতিশোধ ও শোকের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি সাধারণত মহররম মাসে কারবালার যুদ্ধে হজরত হোসেন (রা.)-এর শাহাদাতের স্মরণে উত্তোলন করা হয়। তবে মহররমের বাইরে এমন পতাকা উত্তোলন বিরল ঘটনা, যা ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের কঠোর প্রতিক্রিয়ার ইঙ্গিত দেয়।
পতাকায় লেখা ‘ইয়া লা-সারাত আল-হুসেইন’ অর্থাৎ ‘হে হুসাইনের প্রতিশোধ গ্রহীতারা’, যা ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির নির্দেশে উত্তোলিত হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এই পদক্ষেপকে ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার জবাবে শক্তিশালী হুঁশিয়ারি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শুক্রবার (১৩ জুন ২০২৫) ভোরে তেহরানে ইসরাইলি বিমান হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, এবং ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া, তেহরান ও অন্যান্য শহরের আবাসিক এলাকায়ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের সদর দপ্তর এবং মধ্য ইরানের নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবস্থায় আঘাত করা। তিনি আরও বলেছেন, লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। এর জবাবে ইরানের জনগণ কুম শহরে জামকারান মসজিদের সামনে জড়ো হয়ে ইসরাইলবিরোধী স্লোগান দিয়েছে এবং মিছিলে অংশ নিয়েছে।
ইরানের সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, হামলার পর তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এই হামলায় ওয়াশিংটনের কোনো ভূমিকা নেই।
এই ঘটনা ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও তীব্র করেছে। জামকারান মসজিদে লাল পতাকা উত্তোলনের ঘটনা অতীতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটে ঘটেছে, যেমন ২০২০ সালে জেনারেল কাসেম সোলেইমানি এবং ২০২৪ সালে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার হত্যার পর।
এ.আই/এম.আর