মস্কো, ১৩ জুন ২০২৫ – রাশিয়া ইরানে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাকে "অগ্রহণযোগ্য" এবং "উসকানিমূলক" বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ক্রেমলিন জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং সামরিক কমান্ড কেন্দ্রগুলোতে ইসরায়েলের এই হামলা বিনা কারণে সংঘটিত হয়েছে এবং এটি জাতিসংঘের সনদের লঙ্ঘন। রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছে যে, তারা ইরানের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। খবর রয়টার্সের।
ইরানে ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা রাশিয়ার, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই হামলার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ওয়াশিংটন ও মস্কোর চলমান কূটনৈতিক আলোচনাকে ব্যাহত করেছে। এই আলোচনার লক্ষ্য ছিল ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ হ্রাস এবং তা বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি, যা ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে আস্থা তৈরির সম্ভাবনা ছিল।
ইসরায়েল শুক্রবার (১৩ জুন) দাবি করেছে, তাদের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের অভিযান ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে। শুক্রবার ভোরে তেহরানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর ব্যাপক হামলায় পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং সামরিক কমান্ড কেন্দ্রগুলো লক্ষ্যবস্তু ছিল। তুর্কি সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড পরিচালিত ফার্স নিউজের বরাতে বলা হয়েছে, এই হামলায় কমপক্ষে ৭৮ জন নিহত এবং ৩২৯ জন আহত হয়েছেন, তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
রাশিয়া জোর দিয়ে বলেছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা সন্দেহ দূর করার একমাত্র উপায় হলো কূটনীতি ও আলোচনা। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদ লঙ্ঘন করে বলপ্রয়োগ সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। মস্কো সব পক্ষকে আত্মসংযম প্রদর্শনের এবং মধ্যপ্রাচ্যকে বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে এগোতে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, রাশিয়া উল্লেখ করেছে, আগামী রোববার (১৫ জুন) ওমানে ওয়াশিংটন ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইসরায়েলের এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সৌদি আরব, তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইসরায়েল বছরের পর বছর ধরে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিরুদ্ধে অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছে। এর মধ্যে তেহরানের কাছে মোসাদ এজেন্টদের দ্বারা একটি ড্রোন ঘাঁটি স্থাপন এবং নির্ভুল অস্ত্র ব্যবস্থা ও কমান্ডো পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। টাইমস অফ ইসরায়েলের বরাতে জানা গেছে, এই ড্রোনগুলো রাতারাতি সক্রিয় করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত হানা হয়, যার ফলে ইরান তাৎক্ষণিক পাল্টা হামলা চালাতে ব্যর্থ হয়।
রাশিয়া ও ইরান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। গত জানুয়ারিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান ২০ বছর মেয়াদি একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তবে, মস্কো স্পষ্ট করেছে যে, এই চুক্তিতে পারস্পরিক আত্মরক্ষার অঙ্গীকার নেই এবং তারা মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধে জড়াতে চায় না।
এ.আই/এম.আর