ঢাকা, ১৬ জুন ২০২৫: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে দলের এক নেত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর সোমবার সকালে তার ফেসবুক প্রোফাইলে ৩ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ করে এই অভিযোগ তুলেছেন, যা তিনি দাবি করেছেন তুষার ও ওই নেত্রীর ৪৭ মিনিটের কথোপকথনের অংশ।
ফাঁস হওয়া অডিওতে সারোয়ার তুষারের কণ্ঠসদৃশ একজনের এক নারীর সঙ্গে কথোপকথন শোনা যায়। এতে ওই নারী তুষারের বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেওয়া এবং তার ছবি চাওয়ার অভিযোগ করেন। অডিওতে ওই ব্যক্তি নারীর প্রতিক্রিয়ায় অবাক হন, ছবি চাওয়ার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই বলে দাবি করেন এবং পরে প্রস্তাবের জন্য ক্ষমা চান। কথোপকথন থেকে জানা যায়, এটি গত রমজানের সময়ের কোনো একটি সময়ে রেকর্ড করা, যেখানে ইফতারের পর দেখা করার অনুরোধ করা হয়। তবে কল রেকর্ডে থাকা দুই ব্যক্তির পরিচয় স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
জাওয়াদ নির্ঝর অডিওটির সঙ্গে ফেসবুকে লিখেছেন, “এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার তার দলের নারী কর্মীকে কুপ্রস্তাব দিচ্ছে! গভীর রাতে মেয়েদের ছবি চায়! ওই নারীর সঙ্গে তার ৪৭ মিনিটের কথোপকথনের চুম্বক অংশ দেওয়া হলো। গোটা অডিও নিচের লিংকে আছে!” আরেক পোস্টে তিনি তুষারকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টির নারীরা কি নিরাপদ? আগে থেকে পরিচিত যৌন নিপীড়ক সারোয়ার তুষারকে কেন ছাত্রদের দলের বড় নেতা বানানো হয়েছে?”
এই অভিযোগ সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এক্স-এ একাধিক পোস্টে তুষারের আচরণের নিন্দা করা হয়েছে এবং তার বহিষ্কারের দাবি উঠেছে। ব্যবহারকারী
@Shahiddu1971
তুষারের আচরণকে “রাজনীতির নামে লুনুনীতি” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে
@sarowarhosen03
নামে আরেকজন ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তুষারের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে এই অডিও ফাঁস করেছে।
এনসিপি, যা ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে গঠিত, নিজেকে মধ্যপন্থী ও তরুণদের নেতৃত্বাধীন দল হিসেবে দাবি করে এবং “দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র” ও সিস্টেমিক সংস্কারের পক্ষে কথা বলে। এই কেলেঙ্কারি দলটির প্রগতিশীল ইমেজ এবং সমতা ও অন্তর্ভুক্তির প্রতিশ্রুতিকে ক্ষুণ্ন করতে পারে। এখন পর্যন্ত এনসিপি নেতৃত্ব এই অভিযোগ বা ফাঁস হওয়া অডিও নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এই বিতর্ক এমন এক সময়ে এসেছে যখন এনসিপি ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটি ভোটের বয়স ১৬-এ নামানো এবং নতুন সংবিধান প্রণয়নের মতো সংস্কারের পক্ষে সোচ্চার। তবে, এই ধরনের ঘটনা এবং জনসাধারণের তীব্র পর্যবেক্ষণ দলটির বিশ্বাসযোগ্যতা ও নির্বাচনী সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে, এবং অনেকেই এনসিপির কাছে এই অভিযোগের দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছেন। এই কেলেঙ্কারির ফলাফল দলটির ভবিষ্যত এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
এ.আই/এম.আর