ঢাকা, ৪ মে ২০২৫ – পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধ, দেশটির অভ্যন্তরীণ বিভক্তি এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের নিশ্চয়তার অভাবের কারণে এখনই তাদের প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরতেই হবে, তবে তা কেবল তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই সম্ভব।
রোববার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন: আঞ্চলিক নিরাপত্তার উপর প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। তৌহিদ হোসেন বলেন, “এই সংকটের কার্যকর সমাধান আমরা এখনো খুঁজে পাইনি। প্রত্যাবাসনের জন্য দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—অধিকার এবং নিরাপত্তা। এগুলো নিশ্চিত না হলে রোহিঙ্গারা ফিরবে না।” তিনি আরও বলেন, “যে নির্যাতন থেকে তারা পালিয়েছিল, আমরা কি তাদের সেই পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে দিতে পারি?”
মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “বছরের পর বছর ধরে চলা দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়েছে। একজন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবাসন করা যায়নি। আমিসহ অনেকে সতর্ক করেছিলাম যে এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে না।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, মিয়ানমারে বাস্তব পরিবর্তন প্রয়োজন, এবং তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হতে হবে। “এটি একটি কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। ঐক্যবদ্ধ না হলে এটি সম্ভব নয়,” বলেন তিনি। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, অন্যান্য বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মনোযোগ ধরে রাখতে। তিনি প্রত্যাবাসনের জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তার উপরও গুরুত্বারোপ করেন।
মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “মিয়ানমারে কখনোই সত্যিকারের গণতন্ত্র ছিল না। অং সান সু চির সময়েও এটি আধা-সামরিক শাসন ছিল। এখন আমরা পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধ দেখছি।” তিনি সামরিক জান্তা, আরাকান আর্মি এবং জাতীয় ঐক্য সরকারকে (এনইউজি) প্রধান অংশীদার হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, “স্থায়ী সমাধানের জন্য এই তিন পক্ষের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য, বিশেষ করে আরাকান আর্মি, যারা বর্তমানে রাখাইন নিয়ন্ত্রণ করছে।”
এ.আই/এম.আর