চট্টগ্রামে, ৭ মে, ২০২৫ : পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহা বুধবার দুপুরে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। তার বড় ভাই নন্দ লাল সাহার দাবি, মা আরতি সাহা ও নিজের গায়ে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহার হাত তোলার ঘটনা মেনে নিতে না পেরে এই পথ বেছে নিয়েছেন পলাশ।
নন্দ লাল জানান, দুই বছর আগে ফরিদপুরের চৌধুরীপাড়ায় পলাশের বিয়ে হয়। বিয়ের ৬-৭ মাস পর থেকেই পারিবারিক কলহ শুরু হয়। সুস্মিতা প্রতিনিয়ত ঝামেলা সৃষ্টি করতেন এবং পলাশের মাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর জন্য চাপ দিতেন। পলাশ মাকে পাঠাতে অস্বীকার করেন, কারণ তিনি মা ও স্ত্রী উভয়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে চাইতেন। বুধবার সকালে একটি সামান্য বিষয় নিয়ে সুস্মিতা মা আরতি ও নন্দ লালের গায়ে হাত তোলেন। এই ঘটনা পলাশের জন্য অসহনীয় ছিল, এবং এটিই তার আত্মহত্যার কারণ বলে পরিবারের ধারণা।
দুপুরে চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে অবস্থিত র্যাব-৭-এর ব্যাটালিয়ন সদর দফতর থেকে পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে, যাতে লেখা ছিল: “আমার মৃত্যুর জন্য মা বা বউ কেউ দায়ী নয়। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারিনি। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা কিছু আছে, তা মায়ের জন্য। দিদি যেন সবকিছু কো-অর্ডিনেট করে।” এই চিরকুটের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।
৩৭ বছর বয়সী পলাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-২০১১ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং ৩৭তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন। তিনি এর আগে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
চট্টগ্রাম র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এ. আর. এম. মোজাফফর হোসেন জানান, পলাশ অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অস্ত্র ইস্যু করার পর তিনি নিজ কক্ষে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ শুনে র্যাব সদস্যরা তার কক্ষে গিয়ে তাকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পান। তার পিস্তল মেঝেতে এবং টেবিলে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন জানান, দুপুর ১২টার দিকে পলাশকে হাসপাতালে আনা হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার কানের পাশে রক্তক্ষরণসহ একটি গর্তের মতো চিহ্ন দেখা গেছে, তবে এটি গুলির আঘাত কিনা, তা ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এ ঘটনায় পলাশের পরিবার ও কর্তৃপক্ষ শোকাহত, এবং তদন্ত চলমান রয়েছে।
এ.আই/এম.আর