আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ৫ মে, ২০২৫ :ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করতে পূর্ব ও পশ্চিম কমান্ডের অধীনে দুটি নতুন সেক্টর গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। এই পরিকল্পনায় ১৬টি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠন এবং প্রায় ১৭,০০০ নতুন প্রহরী নিয়োগের কথা রয়েছে। তবে, সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর উদ্ধৃত সূত্র অনুযায়ী, এই প্রস্তাব এখনও নয়াদিল্লির চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি।
বিএসএফের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর মতো বিএসএফেরও শক্তি বৃদ্ধির প্রয়োজন। তিনি বলেন, “আমরা আগামী কয়েক বছরের জন্য নিয়োগ ও নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের পরিকল্পনা করছি, কিন্তু নতুন ব্যাটালিয়নের জন্য সরকার এখনও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি।” বর্তমানে বিএসএফের ১৯৩টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে।
অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, এই প্রস্তাবটি প্রায় চার-পাঁচ বছরের পুরনো এবং এ নিয়ে সময়ে সময়ে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, “এটি এখনও আমাদের প্রস্তাব হিসেবেই রয়েছে, সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি।” তৃতীয় একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা স্পষ্ট করেন, “কিছু সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তবে বিএসএফের পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি, কারণ সরকার এখনও প্রস্তাব অনুমোদন করেনি।”
মিজোরামে নতুন সেক্টরের প্রস্তাব
পূর্ব কমান্ড, যা ৪,০৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পাহারা দেয়, তার অধীনে ছয়টি ফ্রন্টিয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ‘এম অ্যান্ড সি’ ফ্রন্টিয়ার মিজোরাম এবং আসামের কাছাড় অঞ্চলের সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে। এই ফ্রন্টিয়ারের অধীনে বর্তমানে তিনটি সেক্টর রয়েছে—আসামের শিলচর, মিজোরামের আইজল এবং মণিপুরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একটি পৃথক সেক্টর। এখানে ১২টি ব্যাটালিয়ন কাজ করে।
পূর্ব কমান্ডের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, মিজোরামে নতুন সেক্টর গঠনের প্রস্তাব বহু আগে দেওয়া হয়েছিল এবং এটি পুঞ্চ হামলার মতো সাম্প্রতিক ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে, মিজোরামে নতুন সেক্টরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিএসএফের কর্মকর্তাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে এবং এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
পূর্ব কমান্ডের অধীনে দক্ষিণ বঙ্গ, উত্তর বঙ্গ, গুয়াহাটি, মেঘালয় এবং ত্রিপুরায় পাঁচটি ফ্রন্টিয়ার রয়েছে। এছাড়া, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তিনটি ব্যাটালিয়নও এই কমান্ডের অধীনে কাজ করে।
জম্মুতে নতুন সেক্টরের প্রস্তাব
পশ্চিম কমান্ড, যা ২,২৯০ কিলোমিটার ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত এবং ৩৩৯ কিলোমিটার নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পাহারা দেয়, তার অধীনে পাঁচটি ফ্রন্টিয়ার রয়েছে—কাশ্মির, জম্মু, পাঞ্জাব, রাজস্থান এবং গুজরাট। সম্প্রতি পুঞ্চে হামলা এবং সীমান্তে টানা গুলিবর্ষণের পর জম্মুতে নতুন সেক্টর গঠনের কথা ভাবছে বিএসএফ, এমনটাই জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
তবে, দিল্লির বিএসএফ সদর দফতরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, “এই প্রস্তাব নতুন নয়, বরং বেশ কয়েক বছরের পুরনো।” নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতীয় সেনাবাহিনীও বিএসএফের সঙ্গে সামনের সারিতে প্রহরার দায়িত্ব পালন করে।
পূর্ব ও পশ্চিম কমান্ড ছাড়াও বিএসএফের তৃতীয় কমান্ড অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় কাজ করে, বিশেষ করে মধ্য ভারতের রাজ্যগুলিতে মাওবাদী দমনে ‘অ্যান্টি নকশাল অপারেশনস কমান্ড’ নিয়োজিত রয়েছে।
এ.আই/এম.আর