Saturday, July 12, 2025

কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছর ছুটির দিনেও রাজপথে সরব ছিলো শিক্ষার্থীরা

২০২৪ সালের ১২ জুলাই (শুক্রবার), ছুটির দিনে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, এদিন সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা।

আগের দিন, ১১ জুলাই (বৃহস্পতিবার), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দেয় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে, যার ফলে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশের এই হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেলে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শুক্রবার শাহবাগে কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকেল ৪টায়। তবে বৃষ্টির কারণে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল ৫টার দিকে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগে অবস্থান নেন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগ দেন। শাহবাগে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগ মোড় ছাড়ার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, “শনিবার (১৩ জুলাই) দেশের ৬৪ জেলায় অনলাইন ও অফলাইনে প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যা ছয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেব। আমাদের এক দফা দাবি সরকারকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে।” সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সব গ্রেডে বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক কোটা বাতিলের দাবিতে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের ১২তম দিন ছিল শুক্রবার। শুক্রবার রাতে কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা এবং মারধরের অভিযোগে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পরিবহন বিভাগের গাড়িচালক খলিলুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলা করেন, যেখানে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। এদিন বিকেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিকেল সাড়ে চারটায় কলাভবনের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কগুলো ঘুরে বাহাদুর শাহ পার্ক, কবি নজরুল কলেজের সামনে দিয়ে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে শেষ হয়। ঢাকার বাইরে প্রায় ১৫টি স্থানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। তবে মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে গেলে ছাত্রলীগ তাতে বাধা দেয়। শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিকেল ৫টার দিকে স্টেশন বাজারসংলগ্ন রেললাইন অবরোধ করেন তারা। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও এতে অংশ নেন। চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে বিকেল ৫টায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, এর অধিভুক্ত কলেজ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা অংশ নেন। মিছিলটি ২ নম্বর গেট, চকবাজার, জামালখান, কাজীর দেউড়ি হয়ে আলমাস মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মশাল মিছিল বের করেন। সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল করেন। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা ক্যাম্পাসের বাইরে সড়কে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। ময়মনসিংহে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা বিক্ষোভ করেন। এছাড়া আনন্দ মোহন কলেজ, নাসিরাবাদ কলেজ, মুমিনুন্নেছা কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেন। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। নীলফামারীর সৈয়দপুরে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। বগুড়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিকেল সাড়ে ৪টায় শহরের সাতমাথা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। নোয়াখালীর মাইজদী শহরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এদিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, যারা ষড়যন্ত্র করে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল, সেই প্রেতাত্মারা যে এ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নয়, তা আমি অস্বীকার করতে পারব না। সরকারের দায়িত্ব জনগণের জানমাল রক্ষা করা, সুবিধা-অসুবিধা দেখা। এটি কেউ বাধাগ্রস্ত করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।” আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ভর করেছে’। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, “আদালতের প্রতি সবার আস্থা ও শ্রদ্ধা-সম্মান থাকা উচিত। কোটা আন্দোলনের নামে কেউ আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.