গত মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, পাকিস্তানি অভিনেত্রী ও মডেল হুমাইরা আসগর আলির মরদেহ করাচির একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে নয় মাস পর উদ্ধার হয়। সম্প্রতি প্রকাশিত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য: তাঁর দেহ ছিল পচনের চূড়ান্ত পর্যায়ে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কালো হয়ে গিয়েছিল, মুখমণ্ডল অচেনা, এবং চারপাশে ছিল পোকামাকড়। **বাড়িওয়ালার অভিযোগে মেলে খোঁজ** পাকিস্তানের গণমাধ্যম *জিও নিউজ* জানায়, করাচির একটি অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পুলিশ ও আদালতের প্রতিনিধিরা হুমাইরার মরদেহ উদ্ধার করে। বাড়িওয়ালা অভিযোগ করেছিলেন যে হুমাইরা কয়েক মাস ধরে ভাড়া দেননি এবং যোগাযোগে ছিলেন না। এই অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে পুলিশ একটি পচে যাওয়া মরদেহ খুঁজে পায়। প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছিল তিনি নিয়মিত ভাড়া দিতেন, যা পরে সংশোধন করা হয়। এ ঘটনায় পাকিস্তানের বিনোদন জগতে শোক ও বিস্ময় ছড়িয়েছে। **মরদেহের ভয়াবহ অবস্থা** ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, হুমাইরার দেহ ছিল ‘অগ্রসর পচনের পর্যায়ে’। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা জানান, শরীরের অঙ্গগুলো অচেনা হয়ে গিয়েছিল এবং মুখের কোনো বৈশিষ্ট্য বোঝা যায়নি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘পেশি প্রায় ছিল না, হাড় স্পর্শ করলেই ভেঙে যাচ্ছিল, এবং মস্তিষ্ক পচে কালো জৈব পদার্থে পরিণত হয়েছিল।’ হাড়ে কোনো ক্ষত বা ভাঙার চিহ্ন পাওয়া যায়নি, তবে জয়েন্টের কার্টিলেজও ছিল না। দেহের চুলে বাদামি পোকা পাওয়া গেছে, কিন্তু শুঁয়াপোকা ছিল না, যা ইঙ্গিত করে মরদেহ শুকনো পরিবেশে ছিল। **মৃত্যুর কারণ এখনো অজানা** দেহের তীব্র পচনের কারণে মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ নির্ধারণ করা যায়নি। ফরেনসিক পরীক্ষা, ডিএনএ বিশ্লেষণ, এবং টক্সিকোলজি রিপোর্টের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে।
**শেষ যোগাযোগ অক্টোবর ২০২৪-এ**
করাচির ডিআইজি সৈয়দ আসাদ রেজা *আরব নিউজ*-কে জানান, হুমাইরার মুঠোফোনের রেকর্ড অনুযায়ী সর্বশেষ কল অক্টোবর ২০২৪-এ করা হয়েছিল। প্রতিবেশীরাও জানান, তাঁকে শেষবার সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে দেখা গিয়েছিল। অক্টোবরে বিল পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ফ্ল্যাটে কোনো জেনারেটর ছিল না, পানির পাইপ শুকনো ও মরিচা ধরা ছিল, এবং খাবারের জারে ছয় মাস আগের পচন দেখা গেছে। ব্যালকনির একটি দরজা খোলা ছিল, যেখান দিয়ে বাতাস প্রবেশ করত।
**দুর্গন্ধ টের পাননি প্রতিবেশীরা**
ওই তলায় হুমাইরার ফ্ল্যাট ছাড়া আর কেউ থাকতেন না, তাই কেউ দুর্গন্ধ টের পাননি। ফেব্রুয়ারিতে ফিরে আসা প্রতিবেশীরা হালকা দুর্গন্ধ টের পেয়েছিলেন, কিন্তু গুরুত্ব দেননি।
**পরিবার প্রথমে মরদেহ নিতে অনিচ্ছুক** পুলিশ জানায়, হুমাইরার পরিবার প্রথমে মরদেহ নিতে রাজি ছিল না। পরে তাঁর ভাই নাভিদ আসগর করাচিতে এসে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে মরদেহ গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মরদেহ বুঝে নিয়েছি।’ নাভিদ জানান, হুমাইরা সাত বছর আগে লাহোর থেকে করাচিতে চলে আসেন এবং পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। দেড় বছর ধরে তাঁর সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ ছিল না। তাই তাঁর বাবা নির্দেশ দিয়েছিলেন জরুরি পরিস্থিতিতে করাচিতেই দাফন করতে।