সরকারি কলেজের শিক্ষকদের বদলিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা তদবির ও ডিও লেটার নির্ভর প্রথার অবসান ঘটছে। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া এবং প্রভাব খাটানোর চর্চা বন্ধ করে বদলি প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল ও নিয়মতান্ত্রিক করতে সরকার নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। ‘সরকারি কলেজের শিক্ষক বদলি/পদায়ন নীতিমালা ২০২৫’ নামের এই নীতিমালা ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, প্রভাষক থেকে অধ্যক্ষ পর্যন্ত সব শিক্ষককে বদলির জন্য অনলাইনে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করতে হবে। প্রতি তিন মাসে একবার আবেদনের সুযোগ থাকবে এবং সর্বোচ্চ পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পছন্দ হিসেবে উল্লেখ করা যাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সমন্বয়ে দ্বৈত কর্তৃপক্ষ আবেদন মূল্যায়ন করবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দীর্ঘসূত্রতা দূর করার প্রত্যাশা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বদলির আবেদনের জন্য শিক্ষকদের পার্সোনাল ডেটা শিট (পিডিএস) হালনাগাদ করে www.shed.gov.bd, www.dshe.gov.bd অথবা www.emis.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফরম পূরণ করতে হবে। অনলাইন ছাড়া কাগজে, ই-মেইলে, ডিও লেটার বা রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে পাঠানো আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ধরনের আবেদনকে ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক, উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ পদে বদলি ও পদায়নের সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঢাকা মহানগরী, বিভাগীয় শহর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কলেজগুলোতে এই পদগুলোর বদলি ও নিয়োগের দায়িত্বও মন্ত্রণালয়ের। অন্যদিকে, অন্যান্য অঞ্চলের কলেজে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে বদলির দায়িত্ব থাকবে মাউশির।
বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ড. মো. মাসুদ খান রানা বলেন, “এই নীতিমালা তদবির-নির্ভর ও পক্ষপাতদুষ্ট চর্চার অবসান ঘটিয়ে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থার সূচনা করেছে। এটি মেধাবী শিক্ষকদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবে।”
শিক্ষকরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। ঢাকার এক সহকারী অধ্যাপক বলেন, “অনলাইন প্রক্রিয়ার কারণে সবাই সমান সুযোগ পাচ্ছেন, যা যুগোপযোগী।” চট্টগ্রামের এক নারী প্রভাষক বলেন, “তদবির ছাড়া বদলির এই প্রক্রিয়া আমাদের জন্য আশার আলো।”