আওয়ামী লীগকে ‘নিষিদ্ধ সত্তা’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
মব সন্ত্রাস জুলাই আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। শনিবার (৫ জুলাই) জুলাই আন্দোলনের চেতনা বাস্তবায়নে করণীয় নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মব সন্ত্রাস কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি জুলাই আন্দোলনের মূল চেতনার পরিপন্থি। তিনি সতর্ক করে বলেন, মব সন্ত্রাস অব্যাহত থাকলে দেশের গণতান্ত্রিক অর্জন ব্যাহত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংগঠনেরও বিচারের এখতিয়ার রয়েছে। আওয়ামী লীগ একটি নিষিদ্ধ সত্তার নাম। এ নিষিদ্ধ সত্তার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যদি কেউ ভূমিকা পালন করে তাহলে তাকেও অপরাধী হিসেবে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংগঠনেরও বিচারের এখতিয়ার রয়েছে। আওয়ামী লীগ একটি নিষিদ্ধ সত্তার নাম। এ নিষিদ্ধ সত্তার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যদি কেউ ভূমিকা পালন করে তাহলে তাকেও অপরাধী হিসেবে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় ঐক্যমত গঠনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে যে মতপার্থক্য রয়েছে, তা মতবিরোধ নয়, যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। তবে ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে সব দলই ঐক্যবদ্ধ।
তিনি বলেন, মব সন্ত্রাস বিগত ১৭ বছরে স্বজন হারানোর বেদনা এবং নানা অনিয়ম ও অবিচারের বিরুদ্ধে এক ধরণের ক্ষোভ। তবে কোনভাবেই মব সন্ত্রাস গ্রহণযোগ্য নয়। এটি জুলাই আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী। যে প্রক্রিয়ায় সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে মব সন্ত্রাস করা হয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে আমাদের অনেক অর্জন ব্যাহত হবে। তবে অন্যায়কারীদের বিচারের দাবি তুলতে হবে।
এ সময় সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায় আওয়ামী লীগ এড়াতে পারে না। এ আন্দোলনে প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডই পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি ছাড়া হয়নি। গত ১৫ বছরে আওয়ামী সরকার যেভাবে গুম—খুন, হত্যা, টর্চারসেল, আয়নাঘর তৈরি মাধ্যমে যে নির্যাতন করেছে, তা ক্ষমার অযোগ্য। শেখ হাসিনা ছিলেন অত্যাচারী, নির্দয় ও কুৎসিত খুনী। স্বৈরাচারের অ্যাম্বাসাডার, ফ্যাসিস্টের গডমাদার। সারা বিশ্বের ফ্যাসিস্ট রেজিমের মুখপাত্র শেখ হাসিনা। এই উপমহাদেশের ৭০০ বছরের ইতিহাসে তিনি দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি জনরোষে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়েছেন।
কিরণ বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) তার অন্যায়—অত্যাচার, দুনীর্তি—দুঃশাসনের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন জঘন্য অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। জনরোষে শেখ হাসিনা ও তার লেসপেন্সাররা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায়ে দণ্ডিত হলে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বহু নেতাই নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারাবেন। আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। মনে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পর জুলাই আমাদের ইতিহাসের এক যুগান্তকারী দলিল, আমাদের ঐক্যের বন্ধন। জুলাই আমাদের অহংকার। তাই জুলাইয়ের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে।
অন্তর্ভূক্তিমূলক মানবিক রাষ্ট্র গঠনে জুলাইয়ের চেতনা বাংলাদেশের মানচিত্রে অংকিত হয়ে থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জুলাইয়ের চেতনা বৃথা যেতে দেয়া যাবে না। প্রত্যেকটি দলেরই আকাঙ্খা স্বৈরাচারমুক্ত দেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা। কিন্তু কয়েকটি বিষয়ে বিএনপি, জামাত ও এনসিপি’র মধ্যে ঐক্যমতের অভাব সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছে। আমরা আশা করবো আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা ব্যতীত সকল রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকবে। যাতে দেশে আর কোন ফ্যাসিস্টের আবির্ভাব না ঘটে। তাই কাঙ্খিত সময়ে নির্বাচন না হলে পরাজিত শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার শঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, জুলাই অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে দেশের মালিক জনগণ। জনগণকে বঞ্চিত করে কোন ফ্যাসিস্ট ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। এর উপযুক্ত প্রমাণ শেখ হাসিনার পলায়ন। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে দেশে যদি আবার কোন ফ্যাসিজমের জন্ম হয়, তাহলে দেশের ছাত্র—জনতা আগের মতো ১৫ বছর অপেক্ষা করবে না। নতুন অভ্যুত্থান তৈরি হতে পারে। তাই আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা যাতে দেশের পক্ষে কাজ করেন, জনগণের পক্ষে থাকেন, হত্যা, গুম—খুনের রাজনীতি না করেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাকশালী কায়দায় যাতে দেশ শাসন না করেন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে 'জুলাই আন্দোলনের চেতনা বাস্তবায়নে সরকার অপেক্ষা নাগরিক সমাজের ভূমিকা বেশি' শীর্ষক ছায়া সংসদে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র বিতার্কিকদের পরাজিত করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, উপসচিব রোকেয়া পারভীন জুই, উন্নয়ন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক হাসান জাবেদ, সংবাদিক আহমেদ সরওয়ার। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।