Saturday, July 12, 2025

ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছেন পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ


ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর গ্রামের পূর্ব পাড়া এলাকায় বন্যার পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন এক বাসিন্দা। আজ সকালে।

ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। ফেনী-পরশুরামের মূল সড়ক থেকে পানি নেমেছে। গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছেন। পানি কমতে শুরু করায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র স্পষ্ট হচ্ছে। বন্যায় বিভিন্ন সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ফেনীর পাঁচ উপজেলা থেকেই বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার ১১২টি গ্রামের নিচু এলাকায় পানি থাকলেও বেশির ভাগ বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। আজ শনিবার নতুন করে কোনো গ্রাম প্লাবিত হয়নি। আজ সকালে ফুলগাজীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, কিছু সড়ক থেকে পানি নেমে গেছে। তবে গ্রামীণ সড়কগুলো এখনো ডুবে রয়েছে। কিছু বাড়ির উঠানে হাঁটুপানি রয়েছে। বাসিন্দারা এই পানি মাড়িয়েই চলাচল করছেন। অনেকে রোদে ভেজা মালপত্র শুকাচ্ছেন। **বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ উপদেষ্টার পরিদর্শন** অন্তর্বর্তী সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম ফুলগাজী উপজেলার মুহুরী নদীর ভাঙনকবলিত উত্তর শ্রীপুর গ্রামের নাপিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের বাড়িঘর দ্রুত মেরামতের আশ্বাস দেন। ফুলগাজীর কালির হাটের বাসিন্দা আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ঘরের ভেতরে পানি না থাকলেও উঠোনে পানি রয়েছে। পানিতে তাঁদের জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে। এখন তাঁরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। শ্রীপুর পূর্বপাড়ার বাসিন্দা করিম নেছা বলেন, পানিতে তাঁর টিনের ঘরের নিচের অংশ ভেঙেছে। গত বছরের বন্যায় তাঁদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই আবার বন্যার কবলে পড়েছেন। বর্তমানে বাড়িঘর মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ তাঁদের হাতে নেই। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠেছে। ধসে যাওয়া বাড়িঘর মেরামতেও ব্যস্ত অনেক বাসিন্দা। জমিতে ফসল না থাকলেও এবারের বন্যায় পুকুর ও হ্যাচারির খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পরশুরামের উত্তর ধনীকুন্ডার বাসিন্দা বিমল দাস বলেন, ‘আকস্মিক বন্যায় আমার ঘর পুরোটাই ভেঙে পড়েছে। পরিবার নিয়ে অন্য জায়গায় থাকছি। ঘর মেরামতের জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সাহায্য চেয়েছি।’ ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেন বলেন, গত চার দিনের বন্যায় পাঁচ উপজেলায় ৩৪,৬০০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে অনেকের বাড়ি থেকে পানি নেমেছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত ৫,০১৮ জন আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাঁচ উপজেলায় ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ শেষে দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু হবে। **বন্যায় ধসে পড়েছে ঘর** পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অলকা গ্রামে বন্যায় ধসে পড়েছে একটি ঘর।
শুক্রবার রাতে ফেনী সার্কিট হাউসে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়। ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ফেনী সেনাক্যাম্প ইনচার্জ ও ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাহিম মোনায়েম হোসেন, বিজিবি ৪ ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, ফেনী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.