ঢাকা, ২৩ জুলাই ২০২৫ – চীন তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদে (স্থানীয়ভাবে ইয়ারলুং জাংবো নামে পরিচিত) বিশ্বের বৃহত্তম পানিবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ শুরু করেছে, যার আনুমানিক খরচ ১৭০ বিলিয়ন ডলার। যদিও এর শক্তি উৎপাদন বর্তমান থ্রিগর্জেস বাঁধের তুলনায় কম, তবু এর রাজনৈতিক, পরিবেশগত ও কৌশলগত তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা ভারত ও বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের উদ্বোধনের পর চীনের নির্মাণ ও প্রকৌশল খাতে শেয়ারমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পটি এমন একটি অঞ্চলে নির্মিত হচ্ছে যেখানে নদীটি ৫০ কিলোমিটার এলাকায় ২০০০ মিটার উচ্চতা থেকে নামে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পাঁচটি ক্যাসকেড পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে এবং ২০৩০ সালের শুরুতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে খরচ ও পদ্ধতির বাইরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চীন এখনো প্রকাশ করেনি।
এই গোপনীয়তা ভারত ও বাংলাদেশে উদ্বেগের কারণ হয়েছে। তিব্বতের মালভূমি থেকে উৎপন্ন ব্রহ্মপুত্র ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও আসাম হয়ে বাংলাদেশে জমুনা নামে প্রবাহিত হয়, যা লাখ লাখ মানুষের জীবিকা, কৃষি ও পানীয় জলের প্রধান উৎস। অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু সতর্ক করে বলেছেন, বাঁধটি নদীর প্রবাহ ৮০ শতাংশ কমাতে পারে, যার ফলে আসামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে এবং কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় পলি প্রবাহ ব্যাহত হতে পারে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল স্টেকলার এটিকে পানি ও পলির প্রাকৃতিক প্রবাহে বাধা হিসেবে দেখছেন। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সায়ানাংশু মোদক বলেছেন, সীমান্ত সংঘাতের ইতিহাস ও চীনের স্বচ্ছতার অভাব ভারতীয়দের মনে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করছে—চীন কি কৌশলগতভাবে পানি বন্ধ করতে পারে?
**চীনের প্রতিক্রিয়া**
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইয়ারলুং জাংবো পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প চীনের সার্বভৌম বিষয়।’ তারা দাবি করেছে, এটি বন্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে এবং পরিষ্কার শক্তি সরবরাহ করবে। ভাটির দেশগুলোর সঙ্গে পানিবিদ্যুৎ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও দুর্যোগ প্রশমন নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও তারা জানিয়েছে।
**ভারতের প্রতিক্রিয়া ও পানির উৎস বিশ্লেষণ**
ভারতের পররাষ্ট্র ও পানি মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। তবে মোদকের মতে, ব্রহ্মপুত্রের পানির প্রধান উৎস চীন নয়, বরং হিমালয়ের দক্ষিণের মৌসুমি বৃষ্টি। চীনের বাঁধটি ‘রান-অফ-দ্য-রিভার’ প্রকল্প, যা পানি প্রবাহ রুদ্ধ না করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। ভারতও ব্রহ্মপুত্রে দুটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে, যার মধ্যে একটি ১১.৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার, যা দেশের বৃহত্তম পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প হতে পারে।
**ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা**
মোদক বলেন, ভারত এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে চায়। নদীর পানি ব্যবহারের প্রমাণ দিতে পারলে চীনের একতরফা পদক্ষেপের ক্ষেত্র সীমিত হবে। পাকিস্তান সিন্ধু পানি চুক্তির মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ করেছে। আফ্রিকায় মিসর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে নীল নদ নিয়েও উত্তেজনা রয়েছে।
**নিরাপত্তা ঝুঁকি**
বাঁধটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে নির্মিত হচ্ছে, যেখানে ভূমিধস, হিমবাহ-সৃষ্ট বন্যা ও চরম আবহাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। উচ্চ উচ্চতা ও কঠিন আবহাওয়া প্রকৌশল বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ।
চীনের জন্য এই প্রকল্প উন্নয়ন ও শক্তির উৎস হলেও, প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য এটি উদ্বেগ, কৌশলগত জটিলতা ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ। প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও চীনের স্বচ্ছতার ওপর নির্ভর করবে আঞ্চলিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ।
Note For Readers:
The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules.
Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters.
The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.