ঢাকা, ২৫ জুলাই ২০২৫ – আল জাজিরার অনুসন্ধানী ইউনিট (আই-ইউনিট) গোপন ফোন রেকর্ডিং প্রকাশ করে জানিয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। *হাসিনা: জুলাইয়ের ৩৬ দিন* শিরোনামের অনুসন্ধানী ডকুমেন্টারিতে তার ঘনিষ্ঠ মহলের কথোপকথন ও দমননীতির তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন সপ্তাহের আন্দোলনে কমপক্ষে ১,৫০০ জন নিহত এবং ২৫,০০০-এর বেশি আহত হন। নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভ দমনে ৩০ লাখের বেশি গুলি ছুড়েছে।
১৮ জুলাইয়ের একটি অডিওতে শেখ হাসিনা ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে বলেন, “আমার নির্দেশ তো আগেই দেয়া হয়েছে। আমি পুরোপুরি ওপেন অর্ডার দিয়েছি। এখন ওরা মারবে, যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে। আমি এতদিন থামিয়ে রেখেছিলাম, ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছিলাম।” তার গোয়েন্দা সংস্থার রেকর্ড করা আরেকটি কলে তিনি বলেন, “যেখানে তারা জটলা দেখছে, সেটা উপর থেকে—এখন তো উপর থেকেই হচ্ছে।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, এই অভিযানের কোড নাম ছিল *অপারেশন ক্লিন ডাউন*। ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বড় জটলায় বিক্ষোভকারীদের হত্যা করা হতো।
আন্দোলনের প্রতীক আবু সাইদের মৃত্যু পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, হুমকি ও ঘুষের মাধ্যমে তার হত্যাকাণ্ড ধামাচাপার চেষ্টা করা হয়। তার পরিবারকে জোর করে প্রধানমন্ত্রীর সাথে টেলিভিশনে সাক্ষাতে নিয়ে যাওয়া হয়। একটি কলে শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান আবু সাইদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে বলেন, “রংপুর মেডিক্যাল কলেজ কেন আমাদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দিতে দেরি করছে? লুকোচুরি কে খেলছে—রংপুর মেডিক্যাল?”
রংপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম বলেন, “আবু সাইদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাঁচবার লিখতে হয়েছে। প্রতিবার জমা দিলে পুলিশের মন মতো হতো না। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে রিপোর্ট টেম্পারিংয়ের চেষ্টা হয়েছে।” তিনি নিশ্চিত করেন, অনেক বিক্ষোভকারী হেলিকপ্টার থেকে গুলিতে নিহত ও আহত হন।
আল জাজিরা জানায়, সহিংসতার চিত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পৌঁছানো ঠেকাতে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে, যার প্রমাণ ফাঁস হওয়া সরকারি নথিতে পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগের এক মুখপাত্র এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শেখ হাসিনা কখনো “লিথাল ওয়েপন” শব্দটি ব্যবহার করেননি বা প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দেননি। তিনি দাবি করেন, বিক্ষোভকারীদের ক্ষতির কারণেই ইন্টারনেট বন্ধ হয়েছিল।