ঢাকা, ২৮ জুন ২০২৫ – জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে দুই ভাগ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের কারণে দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের শীর্ষ ১৫টি ব্যবসায়ী সংগঠন সরকারের কাছে জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছে।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির অস্থিরতার মধ্যে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি চাপে রয়েছে। এর মধ্যে এনবিআরের অভ্যন্তরীণ অচলাবস্থা ব্যবসা-বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। গত ১৪ মে থেকে এনবিআরে কলমবিরতি শুরু হয়, যা শনিবার থেকে “পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন” কর্মসূচিতে রূপ নিয়েছে। এটি দেশের রপ্তানিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত বলে মন্তব্য করেন তারা। তারা জানান, এনবিআরের আওতাধীন দপ্তরে দৈনিক মাত্র তিন ঘণ্টা কার্যক্রম চালু থাকায় কাঁচামাল খালাস ও ইউজ পারমিট (ইউপি) গ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইউপি পেতে এখন ১০–১৫ দিন লাগছে, যা আগে একদিনে সম্ভব ছিল। বন্দরে পণ্য পড়ে থাকায় রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, এবং বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার বাতিলের হুমকি দিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, পোর্ট ড্যামারেজ বাবদ নির্ধারিত হারের চেয়ে চারগুণ বেশি খরচ হচ্ছে, যা ব্যবসার ব্যয় বাড়াচ্ছে। জুন-জুলাই মাসে পোশাক, চামড়া, সিরামিক, ওষুধ, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্লাস্টিক শিল্প শীতকালীন পণ্য উৎপাদনে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু কাস্টমস হাউস ও বন্ড কমিশনারেটের অচলাবস্থা সাপ্লাই চেইন ভেঙে দিচ্ছে। তারা সতর্ক করে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার অপেক্ষা করে না। এভাবে চললে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করে পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাবে, যা দেশের জন্য বড় আর্থিক ক্ষতির কারণ হবে। ব্যবসায়ী নেতারা এনবিআর সংস্কার ও আধুনিকায়নের পক্ষে থাকলেও চেয়ারম্যান অপসারণকে সমাধান মনে করেন না। তারা পাঁচটি সুপারিশ তুলে ধরেন: ১. এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি সচল রাখা। ২. এনবিআর ভেঙে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ পুনর্মূল্যায়ন করা। ৩. এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে হয়রানিমুক্ত ও স্বচ্ছ সেবা নিশ্চিত করা। ৪. সাপ্লাই চেইন ও বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর সমন্বিত উন্নয়ন নিশ্চিত করা। ৫. অর্থ, বাণিজ্য, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত সংস্কারের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া। তারা প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অর্থ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিডার যৌথ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানান। আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও দেশের স্বার্থে কলমবিরতি ও শাটডাউন প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিসিআই প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হাসান খানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।এ.আই/এম.আর