Saturday, June 28, 2025

বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না আওয়ামী লীগ: মান্না

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। তিনি অভিযোগ করেন, গত পনের বছরে আওয়ামী লীগ যে নৃশংস নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তা ক্ষমার অযোগ্য এবং তা জাতির স্মৃতিতে দগদগে ঘায়ের মতো রয়ে যাবে।

শনিবার (২৮ জুন) ঢাকার এফডিসিতে "ক্ষমতার পালাবদলে তরুণ ভোটারদের ভূমিকা" নিয়ে অয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,  শেখ হাসিনা ছিল একজন কুৎসিত স্বৈরাচার, যে হিটলারকেও হার মানিয়েছিল। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে কেউ আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতা করতে চাইলে তাদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আওয়ামী লীগ আর কখনো সুস্থ ন্যারেটিভ নিয়ে মানুষের সামনে ফিরে আসতে পারবে না। জুলাইয়ের চেতনা আমাদের হৃদয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, যা আরো বহুদিন মশালের মতো জ্বলবে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তরুণরাও দল করেছে, কিন্তু তারা এখনো সবার কাছে যেতে পারেনি। এনসিপি’র মধ্যে অসংলগ্নতা দেখা যাচ্ছে। তাদের কথায় ও কাজে আরো ঐক্যবদ্ধ ও পরিণত হতে হবে। কিছুদিন আগেও মানুষ সন্দেহ করতো ভোট হবে কিনা, কিন্তু এখন মানুষ বিশ্বাস করে ভোট হবে। সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত্যে প্রথমে সব দল একতাবদ্ধ না থাকলেও এখন দেখা যাচ্ছে সবাই ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। আগামীতে যারাই সরকার গঠন করবে তাদের জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেই দেশ পরিচালনা করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পলিয়ে যাবার পর তাদের প্রায় সব নেতাই পালিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ভোটে অংশগ্রহণ করা থাক দূরের কথা, নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জুলাই হত্যাকান্ডসহ গত ১৫ বছরে গুম-খুন, আয়নাঘর সৃষ্টি, অর্থপাচার, ব্যাংক লুট, দুনীর্তি, অনিয়ম-অন্যায়সহ নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলুষিত করার অপরাধে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে বলে মনে হয়। কারণ, শেখ হাসিনাসহ তার অনুসারীরা বিচারে শাস্তি হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। পতিত আওয়ামী সরকার বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়েছিল, তা আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাতি এখন তার অংশগ্রহণ দেখতে চায়। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়া যে কয়টি আসন থেকেই নির্বাচনে প্রার্থী হোন না কেন প্রত্যেকটি আসনেই পূর্বের মতো বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবেন।

তিনি আরও বলেন, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি, ভোট ডাকাতির মাধ্যমে প্রহসনের নির্বাচন করে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে সাবেক তিন প্রধান প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনের নামে মামলা দায়ের হয়। দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনী অপরাধে গ্রেফতার হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করে যিনি নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন সেই বিচারপতি খায়রুল হকের কোন বিচারই দেশবাসী দেখতে পেল না। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার খলনায়ক খায়রুল হক কখন কিভাবে দেশ ছেড়ে পালালো তা অজানা রয়ে গেলো। নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনাক অবৈধভাবে টিকিয়ে রাখার মহা অপরাধী খায়রুল হকের বিচার ও ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার এখন সময়ের দাবি। 

এসময় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে ১০ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন। সুপারিশগুলো হলো- ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করা; বিগত নির্বাচনগুলোতে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নির্বাচন কমিশনার, পুলিশ, প্রশাসন, এসপি ও ডিসিদের বিচারের আওতায় আনা; আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী পরিবেশ না থাকলে ইসিকে যেকোনো সময় ভোট বন্ধ করার এখতিয়ার ফিরিয়ে আনা; রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নাগরিক সংগঠনগুলোর সঙ্গেও নির্বাচন কমিশনের এজেন্ডা ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা; নির্বাচনকালীন সন্ত্রাস, ভীতি সঞ্চার, বা অন্য কোনো ধরনের নির্বাচনী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া; দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী, ব্যাংক লুটেরাসহ ঋণ খেলাপিরা কোনোভাবেই যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য কঠিন আইনের বিধান রাখা; আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া; যেসব আইনের কারণে নির্বাচনকালীন গণমাধ্যম সংবাদ পরিবেশনে বাঁধার সম্মুখীন হতে পারে সেসব আইন বাতিল করা; নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে সদ্য ঘোষিত কমিশনকে এজেন্ডা ভিত্তিক রাজনৈতিক দলসহ নাগরিক সংগঠন গুলোর সাথে সংলাপের আয়োজন করা; এবং নির্বাচন পরবতীর্তে জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘তরুণ ভোটাররাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র বিতার্কিকদের পরাজিত করে ইডেন মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক কাজী জেবেল, সাংবাদিক জাকির হোসেন লিটন, সাংবাদিক সাইদুর রহমান।

প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি



Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.