রাজধানীর কমলাপুরের বাসিন্দা সুনন্দা সরকার তার অসুস্থ স্বামীর জন্য খাবার নিয়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এসে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। লিফটে উঠতেই কয়েকজন যুবক দেশীয় অস্ত্র বের করে বলে, “যার কাছে যা আছে দেন, নাহলে রোগী হয়ে যাবেন।” মুহূর্তের মধ্যে তারা মোবাইল, মানিব্যাগ ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। লিফটের দরজা খুলতেই ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়। দিনদুপুরে এমন ঘটনায় সুনন্দাসহ লিফটে থাকা সবাই আতঙ্কিত হন।অন্য এক ভুক্তভোগী বলেন, “আমার মেয়ে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি। সন্ধ্যায় লিফটে আমি ও আরেকজন ছিলাম। তারা আমাদের কাছ থেকে সবকিছু, এমনকি ওষুধও নিয়ে গেছে।”
রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, পুলিশের কাছে গেলে তারা বলে হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা তাদের দায়িত্ব নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে নীরব।
সরেজমিনে দেখা যায়, মূল গেটে একজন আনসার সদস্য থাকলেও তাকে প্রায়ই ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। জরুরি বিভাগের পাশে কিশোররা টিকটক ভিডিও শুট করছিল, আর হাসপাতালের আশপাশে স্থানীয়দের আড্ডা চলছিল। জরুরি বিভাগের গেটে একজন নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও বাকি ফ্লোরে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। জরুরি বিভাগ থেকে লিফট পর্যন্ত বিশাল ফ্লোরে ভাঙা চেয়ার-টেবিল ফেলে রাখা, আর সেখানে স্থানীয়রা আড্ডা দেন। লিফটে বা তার আশপাশে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই, আর ফ্লোরগুলো দিনের বেলাতেই আধো আলো-আঁধারিতে থাকে।
গত শুক্রবার দুপুরে এই প্রতিবেদকের সামনে ৪০-৫০ জন কিশোর গ্যাং সদস্য অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হাসপাতালে মহড়া দেয়। স্থানীয়রা তাদের বুঝিয়ে বাইরে পাঠায়। তখন মুগদা থানার একটি টহল গাড়ি থাকলেও কোনো পুলিশ সদস্য বাইরে ছিলেন না।
হাসপাতালে কিশোর গ্যাংয়ের অস্ত্রের মহড়া, দিনের বেলায় ছিনতাই ও আধো অন্ধকার ফ্লোরে চলাচলের নিরাপত্তাহীনতায় রোগী ও স্বজনরা আতঙ্কিত। প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকায় অপরাধীরা আরও বেপরোয়া। স্থানীয়দের মতে, হাসপাতালের আশপাশে একাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয়, যারা আড্ডা, মাদকসেবন, ভিডিও শুটিং ও ছিনতাইয়ে জড়িত। হাসপাতালের ৪০-৬০ ওয়াটের লাইট এই বিশাল স্থান আলোকিত করতে অপ্রতুল।
এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এখানে চিকিৎসা করাতে ভয় লাগে। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা ঢাকা মেডিকেল বা বেসরকারি হাসপাতালে যায়।”
ছিনতাইয়ের ঘটনা জানানো হলেও পুলিশ বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয় না। হাসপাতালের পাশে ফল বিক্রেতা মো. সোহেল বলেন, “অস্ত্র নিয়ে মহড়া এখানে নিয়মিত। প্রতিদিনই ছিনতাই হয়। কিশোর গ্যাং এসব করে।” তবে তিনি গ্যাং সদস্যদের পরিচয় দিতে অস্বীকার করেন।
হাসপাতালের পরিচালক ড. মেজবাউর রহমান ছিনতাই নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করে বলেন, “এত কথা বলতে পারব না। ছুটিতে আছি, শান্তিতে থাকতে দেন।” মুগদা থানার ওসি মো. সাজেদুর রহমান ছিনতাইয়ের ঘটনা স্বীকার করে বলেন, “আগের তুলনায় ছিনতাই কমেছে। পরিস্থিতি এখন সহনীয়।” তিনি দাবি করেন, পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে এবং ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমন নিরাপত্তাহীনতা রাজধানীর মাঝখানে এক ভয়াল বাস্তবতা।
Sunday, June 29, 2025
Author: DhakaGate Desk
Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.
এ সম্পর্কিত আরও খবর
- ব্লগার মন্তব্
- ফেইসবুক মন্তব্য