Monday, June 2, 2025

নগদে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম: ২,৫০০ কোটি টাকার বেশি লুটপাটের অভিযোগ

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেনসিক অডিটে মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদের বিরুদ্ধে ২,৫০০ কোটি টাকার বেশি লুটপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। সামাজিক সুরক্ষা খাতের গরিবদের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিলসহ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে এই অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

অডিট প্রতিবেদন অনুসারে, সরকারি তহবিল থেকে ১,৭১১.৪৯ কোটি টাকা, যা গরিবদের জন্য বিভিন্ন ভাতা হিসেবে বিতরণের কথা ছিল, ৪১টি অননুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে নগদ। এছাড়া, ১৮,২৩৩ জন ই-কমার্স গ্রাহকের হিসাব থেকে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে ১৪৪ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। এই অর্থ নগদের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক ও তার সিন্ডিকেটের পকেটে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া, নগদ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি সৃষ্টি করেছে, যা ডাক বিভাগের সঙ্গে চুক্তি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মের লঙ্ঘন। এই অবৈধ ই-মানি সৃষ্টি মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা ইস্যুর সার্বভৌম ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এছাড়া, ৫০০ কোটি টাকার শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে অর্থ পাচারের সন্দেহ পাওয়া গেছে, যেখানে ক্যান্ডেলস্টোন ইনভেস্টমেন্টস পার্টনার লিমিটেড এবং সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের নাম জড়িত।
২০২১ সালে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, আলাদীনের প্রদীপের মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে নগদ হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বলে অভিযোগ। গ্রাহকরা প্রতিবাদ করলে নগদ দাবি করে, সন্দেহজনক লেনদেনের কারণে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, প্ররোচনামূলক ছাড় দিয়ে তাদের লেনদেনে উৎসাহিত করার পর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, নগদ একটি ম্যানুপুলেটেড পোর্টালের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ডাক বিভাগকে ভুল তথ্য সরবরাহ করেছে। ২০১৯ সালে অননুমোদিতভাবে এমএফএস চালু করা নগদকে ২০২০ সালে অন্তর্বর্তীকালীন অনুমোদন দেওয়া হয়, যা ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে, ডাক বিভাগ ও নগদ লিমিটেডের মধ্যে কোনো বৈধ চুক্তি নেই, যা এর কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানান, আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে বর্তমানে হস্তক্ষেপ করা সম্ভব হচ্ছে না, তবে পরবর্তী আদেশের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এমএফএস বাজারের ১৮.৬৪% লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করে নগদ, যার ৯ কোটির বেশি গ্রাহক এবং দৈনিক ১,০০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়।
এই অভিযোগের তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশন কাজ করছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল থানায় নগদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ.আই/এম.আর

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.