ঢাকা, ৩ মে ২০২৫ : বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকাণ্ড আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে দুই ব্যক্তির হাতে সংঘটিত হয়েছিল। তবে ডিএনএ রিপোর্টের অস্পষ্টতার কারণে হত্যাকারীদের এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত টাস্কফোর্সের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে তাদের ভাড়া বাসায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ডিএনএ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রথমে সাগর এবং পরে রুনির ওপর ছুরিকাঘাত করা হয়। হত্যার আগে তারা তাদের সন্তান মেঘের সঙ্গে একই খাটে শুয়ে ছিলেন। তদন্তে দাম্পত্য কলহ, চুরি বা পেশাগত কারণে হত্যার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ভিসেরা রিপোর্টে চেতনানাশক বা বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতিও পাওয়া যায়নি। রান্নাঘরের ছুরি ও বটি দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়, এবং আঘাতের পরও তারা কিছুক্ষণ জীবিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাগর প্রতিরোধ করতে পারেন—এই আশঙ্কায় তার হাত-পা বাঁধা হয়েছিল। রুনিকে নারী হিসেবে দুর্বল মনে করায় তার হাত-পা বাঁধা হয়নি। রক্তের ধরন পর্যবেক্ষণে ধারণা করা হয়, রুনি আগে মারা গেছেন, যদিও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে সাগরের মৃত্যু পরে হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ঘটনাস্থলে চারজনের ডিএনএ পাওয়া গেছে—তিনজন পুরুষ এবং একজন নারী। এর মধ্যে দুজন সাগর ও রুনি, কিন্তু বাকি দুজনের ডিএনএ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ফলে হত্যার উদ্দেশ্য এবং জড়িতদের পরিচয় এখনো নির্দিষ্ট করা যায়নি। তদন্তে অগ্রগতির জন্য টাস্কফোর্স আরো সময় চেয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হত্যার পরদিন সকালে গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ঘটনাস্থলের অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। তবে রান্নাঘরের বারান্দার ১৪.৫ ইঞ্চি ও ৮.৫ ইঞ্চির ভাঙা অংশ নতুন ছিল, যা দিয়ে সহজে প্রবেশ বা বের হওয়া সম্ভব। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ পায়ের ছাপ পাওয়া যায়নি।
সিআইডির সহায়তায় ডিএনএ বিশ্লেষণে টাস্কফোর্স জানায়, দুই বা তিনজনের ডিএনএ একসঙ্গে থাকলে শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু নমুনায় পাঁচ থেকে ছয়জনের ডিএনএ থাকায় তা শনাক্ত করা অসম্ভব হয়েছে।
প্রতিবেদন দাখিলের পর হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও শিকদার মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চ তদন্তের জন্য আরো ছয় মাস সময় দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ, এবং রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির।
২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর হাইকোর্টের নির্দেশে পিবিআই প্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠিত হয়। এতে অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার একজন পুলিশ প্রতিনিধি, সিআইডি ও র্যাবের একজন করে প্রতিনিধি রয়েছেন। ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই টাস্কফোর্স গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর আগে, ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট র্যাবকে তদন্ত থেকে সরিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এবং ১১৮ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা পিছিয়ে গেলেও এই মামলার বিচার এখনো অধরা।
এ.আই/এম.আর