আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ৩ মে ২০২৫, সৌদি আরবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে দোষী সাব্যস্ত দুই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। শনিবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এ নিয়ে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে সৌদি আরবে কমপক্ষে ১০০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে বলে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগদান এবং বিদেশে বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ নেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত দুই সৌদি নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আদালতে দীর্ঘ শুনানির পর অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়।
এএফপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত কার্যকর হওয়া ১০০ মৃত্যুদণ্ডের মধ্যে ৫৯টি ছিল মাদক সংক্রান্ত অপরাধে, এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে কমপক্ষে ৪৩ জন ছিলেন বিদেশি নাগরিক। সৌদি আরবে হত্যা, সন্ত্রাসী হামলা, মাদক চোরাচালান ও পাচারের মতো অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে মাদকের মতো প্রাণঘাতী নয়—এমন অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন রিপ্রিভের প্রধান জিদ বাসিউনি বলেন, “সৌদি আরব নিজেকে কূটনৈতিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশটির মানবাধিকার লঙ্ঘন উপেক্ষা করছে। ফলাফল? জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ১০০ জনেরও বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি মাদক সংক্রান্ত অপরাধে।” তিনি জানান, ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৪৫।
প্রায় তিন বছর বিরতির পর ২০২২ সালের শেষ দিকে সৌদি আরব মাদক সংক্রান্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর শুরু করে। এএফপির তথ্যমতে, ২০২৪ সালে ৩৩৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়, যা ২০২৩ সালের ১৭০ জনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ এবং ২০২২ সালের ১৯৬ জনের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২২ সালের মার্চে একদিনে ৮১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব বিশ্বব্যাপী নিন্দার মুখে পড়েছিল।
গত মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মাদক সংক্রান্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের “উদ্বেগজনক বৃদ্ধির” তীব্র সমালোচনা করে। মানবাধিকারকর্মীদের মতে, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ভিশন-২০৩০ সংস্কার পরিকল্পনা, যা একটি উদার ও সহনশীল সমাজ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে, মৃত্যুদণ্ডের এই প্রবণতা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সৌদি আরব তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে সরে এসে পর্যটন ও ক্রীড়াক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনা।
সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি, জনশৃঙ্খলা রক্ষায় মৃত্যুদণ্ড অপরিহার্য এবং এটি কেবল সকল আপিল প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই কার্যকর করা হয়।
এ.আই/এম.আর