ঢাকা, ২১ মে ২০২৫ – জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, ভ্যাট এবং আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতিনিধিত্বকারী এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ চার দফা দাবি আদায়ের জন্য অনির্দিষ্টকালের অসহযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বুধবার (২১ মে ২০২৫) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
পরিষদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: সম্প্রতি জারি করা এনবিআর বিভক্তকরণ অধ্যাদেশের অবিলম্বে বাতিল, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ, এনবিআর সংস্কার উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশ জনসম্মুখে প্রকাশ এবং এনবিআর কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ এবং রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে, আগামী বৃহস্পতিবার (২২ মে ২০২৫) প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। একই দিন ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এছাড়া, শনিবার ও রোববার দেশের সব ট্যাক্স, কাস্টমস এবং ভ্যাট দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালন করা হবে। তবে কাস্টমস হাউস, এলসি স্টেশন, রপ্তানি কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কর্মবিরতির আওতার বাইরে থাকবে বলে পরিষদ জানিয়েছে।
গত ১২ মে ২০২৫ তারিখে জারি করা একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি পৃথক বিভাগ গঠন করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ইতিমধ্যে টানা চার কর্মদিবস কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করেছে। সমালোচকদের মতে, এই অধ্যাদেশ ট্যাক্স এবং কাস্টমস বিভাগের অভিজ্ঞ পেশাদারদের বাইরে রেখে প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মূল পদগুলোতে নিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে, যা রাজস্ব প্রশাসনের স্বায়ত্তশাসন এবং দক্ষতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
পরিষদের একজন মুখপাত্র সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা সংস্কারের বিরোধী নই, তবে এটি অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে এবং এনবিআর কর্মকর্তাদের দক্ষতার স্বীকৃতি দিয়ে বাস্তবসম্মত হতে হবে।” পরিষদ সরকারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য সংলাপের দ্বার উন্মুক্ত রেখেছে বলে জানিয়েছে এবং করদাতা ও সেবাগ্রহীতাদের কাছে সাময়িক অসুবিধার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। তারা আশ্বাস দিয়েছে যে, দাবি পূরণ হলে অতিরিক্ত সময় কাজ করে যেকোনো অমীমাংসিত বিষয় সমাধান করা হবে।
এনবিআর কর্মকর্তাদের চলমান এই আন্দোলন ইতিমধ্যে ট্যাক্স, ভ্যাট এবং কাস্টমস দপ্তরে কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। পরিষদ সতর্ক করে বলেছে, তাদের দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে, যা রাজস্ব আদায় এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।