আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ১৯ মে ২০২৫ : প্রায় ৮০ দিন ধরে অবরোধের পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সোমবার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সামান্য ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। ১৯ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি বাসিন্দার জন্য মাত্র ৯টি ত্রাণবাহী ট্রাক, যা শিশুখাদ্যসহ জরুরি সামগ্রী বহন করছে, গাজায় প্রবেশ করতে পেরেছে।
আইডিএফের সরকারি কার্যক্রম সমন্বয় বিভাগের প্রধান ঘাসান এলিয়ান ইসরায়েলের আর্মি রেডিওকে বলেন, “আজ সোমবার গাজায় শিশুখাদ্য ও ত্রাণসামগ্রীবাহী ৯টি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রবেশের আগে ট্রাকগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে।” তিনি জানান, ত্রাণ প্রথমে গাজার আন্তর্জাতিক সংস্থার গুদামে পৌঁছাবে এবং জাতিসংঘ ও রেডক্রসের তত্ত্বাবধানে বিতরণ করা হবে।
শান্তির সময়েও দারিদ্র ও বেকারত্বে জর্জরিত গাজার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দার এক-তৃতীয়াংশ ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল ছিল। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর এই নির্ভরতা আরও বেড়েছে। তবে, ইসরায়েল ত্রাণ প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যুক্তি দিয়ে যে ত্রাণ হামাসের হাতে পড়লে তারা শক্তিশালী হবে।
অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জানায়, ইসরায়েলি গোলার আঘাতে যত মৃত্যু হয়েছে, খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর সংখ্যাও প্রায় সমান। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অভিযান শুরুর পর গাজায় লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার অর্ধেক ঘটেছে খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসার অভাবে।
রোববার প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, গাজার ক্ষুধা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি খাদ্য সরবরাহ শুরু হবে, কারণ দুর্ভিক্ষ ইসরায়েলি অভিযানে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে অভিযানে গাজায় ৫৩,১১৯ জন নিহত ও ১,২০,২১৪ জন আহত হয়েছেন, যাদের ৫৬% নারী ও শিশু।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে। জবাবে ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করে। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারীদের চাপে ১৯ জানুয়ারি ২০২৫-এ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ১৮ মার্চ থেকে দ্বিতীয় দফায় অভিযান শুরু হয়, যাতে গত দুই মাসে প্রতিদিন ২,৯৮৫ জন নিহত ও ৮,১৭৩ জন আহত হয়েছেন। ১ মার্চ থেকে ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রবেশ বন্ধ করে ইসরায়েল, যা সংকটকে আরও তীব্র করেছে।
এ.আই/এম.আর