১৯ মে ২০২৫ : দীর্ঘ জটিলতা কাটিয়ে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সাতটি সরকারি কলেজ অবশেষে অন্তর্বর্তী প্রশাসন পেয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই কলেজগুলোকে নিয়ে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠনের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৮ মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এই নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অধ্যাপক ইলিয়াস তার মূল দায়িত্বের (ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ) পাশাপাশি প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বিধিমোতাবেক অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা পাবেন এবং তার অধ্যক্ষ পদের চুক্তির অবসান বা সরকারের সিদ্ধান্ত—যা আগে ঘটে—ততদিন পর্যন্ত এই দায়িত্বে থাকবেন।
অভিজ্ঞতার সুবিধা মিলবে প্রশাসনে
অধ্যাপক ইলিয়াস এর আগে সাত কলেজের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, ফলে তিনি এই কলেজগুলোর প্রশাসনিক কাঠামো ও শিক্ষাগত বাস্তবতা সম্পর্কে গভীরভাবে অবগত। বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিজ্ঞতাই তাকে প্রশাসক হিসেবে নির্বাচনের অন্যতম কারণ। তার নেতৃত্বে সাত কলেজের দীর্ঘদিনের সংকট নিরসন এবং বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও জানানো হয়, গত রোববার (১৮ মে) সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৯ ধারার আওতায় অধ্যাপক ইলিয়াসকে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগের শর্ত হিসেবে তার অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) স্থগিত করা হয়েছে এবং অন্য কোনো পেশা বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে।
থমকে থাকা কার্যক্রমে গতি আসবে
প্রশাসক নিয়োগ না হওয়ায় ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে থমকে ছিল। এর ফলে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা, বাজেট পরিকল্পনা, অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারসহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছিল। প্রশাসক নিয়োগের ফলে এসব কার্যক্রম এখন গতি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, “সাত কলেজের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে আমরা ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। তারা এখন প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। নতুন প্রশাসক দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কাজের নির্দেশনা দেবেন। তবে সার্বিক বিষয়ে ইউজিসি তদারকি করবে।”
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া ও দাবি
শিক্ষার্থীরা এই নিয়োগকে তাদের বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন। তবে তারা জানিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ অধ্যাদেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠাম–
System: শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া ও দাবি
শিক্ষার্থীরা এই নিয়োগকে তাদের বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন। তবে তারা জানিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ অধ্যাদেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন স্থগিত থাকলেও তদারকি অব্যাহত থাকবে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. আব্দুর রহমান বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমরা যে দাবিগুলো তুলে ধরছিলাম, তার প্রথম ধাপে বড় অগ্রগতি হলো অন্তর্বর্তী প্রশাসক নিয়োগ। তবে এর ধারাবাহিকতায় পুরো অধ্যাদেশ ও রূপরেখা দ্রুত প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।”
দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তা
বিশ্লেষকরা মনে করেন, অন্তর্বর্তী প্রশাসনের মাধ্যমে সাত কলেজের যাত্রা শুরু হলেও ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ এখন সময়ের দাবি। অধ্যাপক ইলিয়াসের কার্যকর নেতৃত্বে সাত কলেজের সংকট নিরসন এবং একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।
এই নিয়োগের ফলে সাত কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তবে, প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরুর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ এবং সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এখন অত্যন্ত জরুরি
এ.আই/এম.আর