নয়াদিল্লি, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫
ভারত ফ্রান্সের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে একটি চুক্তি সই করেছে, যার আওতায় ৭৪০ কোটি ডলার মূল্যে ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনবে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই চুক্তিতে ২২টি একক আসনের এবং ৪টি দুই আসনের যুদ্ধবিমান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বর্তমানে ভারতের হাতে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান রয়েছে, এবং নতুন এই যুদ্ধবিমানগুলো দেশটির নৌবাহিনীর শক্তি আরও বাড়াবে।
এই চুক্তি এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই পর্যটক। নয়াদিল্লি এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এরপর থেকে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে টানা চার দিন ধরে গোলাগুলি চলছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংকট সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
ফরাসি মহাকাশ সংস্থা দাসোঁ এভিয়েশনের তৈরি এই রাফাল যুদ্ধবিমানগুলো ভারতের নিজস্ব বিমানবাহী রণতরি থেকে পরিচালিত হবে, যা রাশিয়ার মিগ-২৯কে যুদ্ধবিমানের স্থলাভিষিক্ত করবে। চুক্তির আওতায় প্রশিক্ষণ, সিমুলেটর, অস্ত্র, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি এবং রক্ষণাবেক্ষণ সরঞ্জামও সরবরাহ করা হবে। এছাড়া ভারতীয় বিমানবাহিনীর বর্তমান রাফাল বহরের জন্য অতিরিক্ত সরঞ্জামও দেওয়া হবে।
২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফ্রান্সের বাস্তিল দিবস উদযাপনে গিয়ে এই ২৬টি যুদ্ধবিমান কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। ভারত তার সামরিক সরঞ্জাম আধুনিকীকরণের পাশাপাশি অস্ত্র সরবরাহকারী দেশের বৈচিত্র্য আনছে। রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকলেও ভারত এখন ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের কাছ থেকেও অস্ত্র কিনছে।
দাসোঁ এভিয়েশন জানিয়েছে, রাফাল যুদ্ধবিমান ভারতকে ‘অত্যাধুনিক সক্ষমতা’ প্রদান করবে এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভারতের নৌবাহিনী ফ্রান্সের বাইরে প্রথম রাফাল মেরিন জেট ব্যবহারকারী হতে যাচ্ছে।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২৩ সালে ভারত বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ ছিল, যা বিশ্বের মোট অস্ত্র আমদানির প্রায় ১০ শতাংশের জন্য দায়ী।
২০২০ সালে চীনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের পর ভারত প্রতিরক্ষা খাতে ব্যাপক সংস্কার শুরু করে। এই সংস্কারের মধ্যে রয়েছে বিদেশি সরবরাহকারীদের সঙ্গে নতুন চুক্তি এবং দেশীয়ভাবে সামরিক সরঞ্জাম তৈরির জন্য আইন সহজ করা। এই প্রতিবেদন ভারতের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে দেশটির কৌশলগত পদক্ষেপের গুরুত্ব তুলে ধরে।
এ.আই/এম.আর