Friday, September 5, 2025

মেসির ‘শেষ নৃত্যে’ আর্জেন্টিনার মাটিতে জোড়া গোলের জাদু, ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ৩-০ জয়

এস্তাদিও মনুমেন্তালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ৩-০ গোলে জয়লাভ করেছে আর্জেন্টিনা, আর এই জয়ের নায়ক ছিলেন লিওনেল মেসি, যিনি জোড়া গোল করে নিজের দেশের মাটিতে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে তাঁর শেষ ম্যাচটিকে অবিস্মরণীয় করে তুলেছেন। এই ম্যাচ ছিল মেসির জাতীয় দলের জার্সিতে আর্জেন্টিনার মাটিতে শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ, যা সমর্থক, খেলোয়াড় এবং এই কিংবদন্তির জন্যই ছিল আবেগঘন মুহূর্ত।

২০ বছর আগে, ২০০৫ সালের ৯ অক্টোবর, এই মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামেই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেক করেছিলেন। দুই দশক পর, একই মঞ্চে তিনি তাঁর শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেললেন। ম্যাচের আগে কালো জ্যাকেটে স্ট্রেচিং করার সময় মেসির চোখে আবেগের ছাপ স্পষ্ট ছিল। গ্যালারির সমর্থকদের চোখেও ছিল সেই একই ভাব—তাঁদের প্রিয় তারকাকে হয়তো শেষবারের মতো এই মাঠে দেখছেন।

মেসি হতাশ করেননি। ৩৯ মিনিটে লিয়ান্দ্রো পারেদেস মাঝমাঠে ভেনেজুয়েলার মিডফিল্ডারের ভুলের সুযোগ নিয়ে হুলিয়ান আলভারেজকে লম্বা পাস দেন। আলভারেজ ডান প্রান্ত থেকে ভেতরে ঢুকে একজন ডিফেন্ডারকে ডজ দিয়ে বক্সে থাকা মেসিকে পাস দেন। সামনে গোলকিপার ও দুই ডিফেন্ডার থাকলেও মেসি তাঁর চিরচেনা জাদু দেখান। জোরালো শটের বদলে তিনি বলটি চিপ করেন, আর সেটি বাতাসে ভেসে গিয়ে জালে জড়ায়—যেন এক অমর চিত্রকর্ম! ৮০ মিনিটে মেসি তাঁর দ্বিতীয় গোলটি করেন। থিয়াগো আলমাদার ক্রস থেকে বাঁ পায়ের স্পর্শে তিনি বলটি জালে জড়ান। এই গোলের মাধ্যমে তিনি এবারের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ৭ গোলে লুইস দিয়াজের সঙ্গে শীর্ষে উঠে আসেন, এবং পরে তাঁকে ছাড়িয়েও যান। তৃতীয় গোলটি আসে ৭৬ মিনিটে, লাওতারো মার্তিনেজের হেডে, যা নিকো পাজের ক্রস থেকে আসে। তবে এই গোলের পেছনেও ছিল মেসির অবদান—তাঁর ফ্রি-কিক থেকে দেওয়া ডিফেন্সচেরা পাস। ৮৯ মিনিটে রদ্রিগো দি পলের পাস থেকে মেসি গোল করলেও ভিএআর-এ তা অফসাইড ঘোষিত হয়। তবু, মেসির পারফরম্যান্স ছিল তাঁর অবিশ্বাস্য প্রতিভার প্রমাণ। ভেনেজুয়েলা একটিও শট নিতে পারেনি, আর আর্জেন্টিনা তাদের গোলপোস্টে ৯টি শট নিয়েছে। এই ম্যাচ শুধু ফুটবলেরই ছিল না, ছিল মেসির উত্তরাধিকারের উদযাপন। জাতীয় সংগীতের সময় তাঁর তিন ছেলের সঙ্গে মাঠে দাঁড়ানো, আর্জেন্টাইন গায়িকা ইউজেনি কুয়েভেদোর গান, সমর্থকদের আবেগ—সবই ছিল অসাধারণ। মেসির স্ত্রী আন্তোনেলা রোকুজ্জোকে গ্যালারিতে দেখা গেছে, ম্যাচের শুরুতে হাসি আর শেষে গম্ভীর মুখ নিয়ে। ১৭ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইয়ে শীর্ষে থাকা আর্জেন্টিনার জন্য এই ম্যাচ ছিল আনুষ্ঠানিকতা। তবে মেসির উপস্থিতি এটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। *লা নাসিওন*-এর খবরে বলা হয়েছে, আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) ২০২৬ বিশ্বকাপের আগে জুনে একটি প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করতে পারে। না হলে, এই ম্যাচই হয়ে থাকবে মেসির দেশের মাটিতে জাতীয় দলের জার্সিতে শেষ ম্যাচ। ১০ সেপ্টেম্বর ইকুয়েডরের বিপক্ষে তাদের মাটিতে আর্জেন্টিনার শেষ বাছাই ম্যাচ।
মেসির এই ‘শেষ নৃত্য’ সমর্থকদের হৃদয়ে চিরকাল রয়ে যাবে, আর তারা হয়তো ভাবছেন, রেফারিরা যদি যোগ করা সময়টা আরেকটু বাড়াতেন, তাহলে কীই-বা হতো!

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.