Saturday, September 6, 2025

ইসরায়েলের হামলায় গুঁড়িয়ে গেল গাজা নগরীর বহুতল ভবন

গাজা নগরীর সুসি টাওয়ারের ধ্বংসস্তূপের পাশে বসে আছেন এক অসহায় ফিলিস্তিনি। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজা নগরীর বাসিন্দাদের শহর ছেড়ে উপত্যকার দক্ষিণে ‘মানবিক এলাকায়’ আশ্রয় নিতে নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশের পরপরই ইসরায়েলি বাহিনী গাজা নগরীর আরেকটি বহুতল আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ওই ভবনে বেশ কয়েকটি বেসামরিক ফিলিস্তিনি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল।

গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় শহর গাজা নগরী। গত মাস থেকে এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে ইসরায়েলি বাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে। আকাশপথে হামলার পরিমাণ বাড়িয়েছে এবং নগরীর উপকণ্ঠে স্থল অভিযান চালাচ্ছে। এতে আগে থেকেই সংকটে থাকা ফিলিস্তিনিদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। এই অভিযান কত দিন চলবে, তা ইসরায়েল জানায়নি।

শনিবার ইসরায়েলি বাহিনী ১৫ তলা সুসি রেসিডেনশিয়াল টাওয়ারে হামলা চালায়। তারা দাবি করেছে, হামাস গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও ইসরায়েলি সেনাদের পর্যবেক্ষণের জন্য ভবনটিতে যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছিল। তাই এটি ধ্বংস করা হয়েছে, তবে বেসামরিক মানুষের ক্ষতি কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তাদের চোখের সামনে ভবনটি ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এই ধ্বংসের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। আগের দিনও তিনি আরেকটি বহুতল ভবনের ধ্বংসের ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন। কাৎজ বলেছেন, এ ধরনের হামলা অব্যাহত থাকবে। ইসরায়েলি বাহিনীও একই হুঁশিয়ারি দিয়েছে। হামাসের ব্যবহৃত স্থাপনা, বিশেষ করে বহুতল ভবনগুলো আগামী দিনে লক্ষ্য করা হবে। শুক্রবার আরেকটি বহুতল ভবন থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়। এক্সে এক পোস্টে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র অ্যাভিচে আদ্রাই গাজা নগরীর বাসিন্দাদের খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় সরে যেতে বলেন। তিনি জানান, সেখানে খাবার, তাঁবু, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় নৃশংস হামলা চালাচ্ছে। হামলার শুরুতে আল-মাওয়াসিকে ‘নিরাপদ’ এলাকা ঘোষণা করা হলেও, হামাস যোদ্ধারা বেসামরিক মানুষের মধ্যে লুকিয়ে আছে বলে বারবার হামলা চালানো হয়েছে। এতে ফিলিস্তিনিরা সেখানে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। জেইতুনের বাসিন্দা আবদেল নাসের মুসতাহা (৪৮), যিনি এখন রিমালে আশ্রয় নিয়েছেন, বলেন, “কেউ বলছেন পালাও, কেউ বলছেন না। গাজার সব জায়গায় বোমাবর্ষণ হচ্ছে। দেড় বছর ধরে আল-মাওয়াসিতে হত্যাযজ্ঞ চলছে।”
শনিবার গাজায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। ২৩ মাস ধরে চলা হামলায় ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৬২ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, গাজা নগরী দখলের অভিযান এগিয়ে গেলে ‘বিপর্যয়কর’ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। গত মাসে জাতিসংঘ–সমর্থিত আইপিসি গাজা নগরীতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। জাতিসংঘের হিসাবে, এই এলাকায় প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত। নাসের মুসতাহার মেয়ে সামিয়া মুসতাহা (২০) বলেন, “আমরা কোথায় যাব? বোমা বা অনাহার—মৃত্যু আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।”

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.