Wednesday, September 3, 2025

ভারতে বসেই দেশে বিশ্ববিদ্যালয় চালু ফ্যাসিস্ট হানিফের! কীভাবে সম্ভব?

পতিত স্বৈরাচার হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী, কুষ্টিয়ার আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ভারতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থাতেও বাংলাদেশে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছেন। এই ঘটনা নিয়ে চারদিকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ভারতে পালিয়ে থেকেও তিনি কীভাবে *লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়* চালু করলেন এবং নিজের তত্ত্বাবধানে রাখলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৪ জুন হানিফ তার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে ম্যানেজ করে তার স্ত্রী ফৌজিয়া আলমের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেন। প্রতিষ্ঠানটি কুষ্টিয়ার হাউজিং স্টেটের ৬ ও ৭ নম্বর প্লটে গড়ে তোলার কথা ছিল, কিন্তু সেখানে আজও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। হানিফ নিজে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন, আর তার স্ত্রী ছিলেন চেয়ারম্যান। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২২টি শর্ত আরোপ করেছিল, কিন্তু হানিফ সেগুলোর অধিকাংশ উপেক্ষা করে প্রভাব খাটিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের বাণিজ্যিক ভবনে অবস্থিত অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, হানিফ ভারতে পালিয়ে কলকাতার একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে আশ্রয় নেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের কয়েক মাস পর হানিফ ভারত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে তৎপর হন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ট্রাস্টি বোর্ডে পরিবর্তন আনা হয়; ফৌজিয়া আলমকে বাদ দিয়ে হানিফের দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন ও হেলথকেয়ার ফার্মার সিইও হালিমুজ্জামানকে চেয়ারম্যান করা হয়। স্থানীয়রা বলছেন, নতুন বোর্ডেও হানিফ তার লোকদের রেখেছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ব্যবসায়ী অংশীদাররা পুনর্বহাল থেকেছেন। কৌশলে শুধু কয়েকজন আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট সদস্যকে বাদ দিয়ে তিনি নিজের প্রভাব ধরে রেখেছেন। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। ছয়টি অনুমোদিত বিভাগের মধ্যে পাঁচটিতে ভর্তি চলছে। ১০১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন: সিএসই-তে ৩৫, ইইই-তে ২৫, ইংরেজিতে ২৫, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ৬, এবং ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সে ১০ জন। অর্ধশতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত ক্যাম্পাসটি আধুনিক রূপে সংস্কার করা হয়েছে, জেলা পরিষদের বাণিজ্যিক ভবনের সপ্তম ও অষ্টম তলায় অস্থায়ী কার্যক্রম চলছে, যদিও এই ভবনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অনুমোদিত নকশা ছিল না। গোপন সূত্রে জানা যায়, উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে, এবং তিন সদস্যের একটি প্যানেল মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ভারতে বসে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর এই কৌশল বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার জবাবদিহি ও প্রশাসনিক দুর্বলতার উদ্বেগজনক প্রতিচ্ছবি। এতে রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনিক ব্যর্থতা, ও নৈতিক দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে। হানিফের মতো ফ্যাসিস্ট ব্যক্তিরা যদি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করেন, তবে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে। হাসিনার ১৬ বছরের শাসনে অযোগ্য মন্ত্রীরা কারিকুলামে পরিবর্তন এনে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ও শিক্ষার মান নষ্ট করেছে।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.