Saturday, August 23, 2025

রাখাইনে অপেক্ষমাণ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা, ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গা অপেক্ষায় রয়েছে। তারা সুযোগ পেলেই যেকোনো সময় বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে। এমনটা হলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মানবিক ও নিরাপত্তা সংকট আরও জটিল হবে।

কক্সবাজারের ক্যাম্পে আরাকানের বুথিডং থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা যুবক সেলিমের সঙ্গে যমুনা টেলিভিশনের কথা হয়। সেলিম জানান, তিনি বেঁচে গেলেও আরাকান আর্মির নির্যাতনে তার পরিবারের তিন সদস্যকে হারিয়েছেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘরে দেখা যায়, সেখানে বসবাসকারী অনেকেই আরাকান আর্মির নির্যাতনের ক্ষত বহন করছেন। কারো হাত, কারো পা কেটে নেয়া হয়েছে, আবার কেউ কেউ চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন। আট বছর আগে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও রাখাইনদের নির্যাতনে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেন, জান্তা সরকারের পথেই আরাকান আর্মি হাঁটছে এবং নির্যাতনের পর নাগরিক সনদসহ গুরুত্বপূর্ণ দলিল কেড়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি রাখাইনে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে শত শত রোহিঙ্গাকে হত্যার প্রমাণ মিলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিগত ও ধর্মীয় বিরোধ না মিটলে এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ প্রায় অসম্ভব। অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, সামরিক বা নির্বাচিত সরকার যেই থাকুক, তাদের অবস্থান পরিবর্তন না হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। আফগানিস্তান, প্যালেস্টাইন ও ইউক্রেনের শরণার্থীরাও তৃতীয় দেশে আশ্রয় নিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে আরাকান আর্মির নির্যাতনে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। তবে সীমান্তে অপেক্ষমাণ রোহিঙ্গারা ঢুকে পড়লে বাংলাদেশ নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। প্রত্যাবাসন কমিশন জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরো অর্ধলক্ষ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এটি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সীমান্ত দিয়ে মাদক, অস্ত্র প্রবেশসহ অপরাধমূলক কার্যক্রম চলছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী এর মুখোমুখি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, নাফ নদীর ওপারে আরাকানের মংডু টাউনশিপ অবস্থিত। সেখান থেকে আট বছর আগে অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও জান্তা সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে এসেছিল। এই ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ফলে প্রত্যাবাসন শুরু না হলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের নতুন ঢল নামতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.