Friday, August 1, 2025

ভারত ট্রাম্পকে খুশি করতে আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, তাৎক্ষণিক পাল্টা শুল্কের পরিকল্পনা নেই

নয়াদিল্লি, ১ আগস্ট ২০২৫: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতীয় রপ্তানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হঠাৎ ঘোষণার জবাবে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে প্রাকৃতিক গ্যাস, যোগাযোগ সরঞ্জাম এবং সোনার মতো পণ্যের আমদানি বাড়ানোর উপায় খুঁজছে। তবে, আলোচনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে তারা বিস্মিত ও হতাশ হলেও এখনই পাল্টা শুল্ক আরোপের কোনো পরিকল্পনা নেই।

নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা জানান, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের প্রায় ৪৩০০ কোটি ডলারের বাণিজ্যঘাটতি কমাতে আগামী তিন-চার বছরে আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে ভারত। তবে, ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হোয়াইট হাউস সফরে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের মতো অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার কোনো পরিকল্পনা নেই।

ভারত জোর দিয়ে বলেছে, তারা কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করে একটি ‘ন্যায্য ও পারস্পরিক লাভজনক’ বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও গাড়ির ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের জন্য ভারত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) তাদের অধিকার সংরক্ষণ করেছে। বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল পার্লামেন্টে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতির প্রভাব আমরা খতিয়ে দেখছি। রপ্তানিকারক ও শিল্পগোষ্ঠীর কাছ থেকে মতামত নেওয়া হচ্ছে। জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও অগ্রগতির জন্য সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বৃহস্পতিবার সিএনবিসিকে বলেন, ভারতের অনীহার কারণে বাণিজ্য আলোচনা ধীরগতিতে চলছে। তিনি বলেন, মার্কিন বাণিজ্য দল ভারত নিয়ে হতাশ এবং পরবর্তী পদক্ষেপ ভারতকেই নিতে হবে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ভারত ‘ভালো বৈশ্বিক অংশীদার নয়’। ট্রাম্প ও মোদির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও, বুধবার ট্রাম্প ভারতের শুল্ককে ‘অতিরিক্ত উচ্চ’ এবং বাণিজ্য বাধাকে ‘কঠিন ও বিরক্তিকর’ বলে অভিযোগ করেন। তিনি রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও অস্ত্র কেনার জন্য ভারতের ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেন। পরে ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে, আমি কেয়ার করি না,’ এবং ভারত ও রাশিয়াকে ‘মৃত অর্থনীতি’ বলে উল্লেখ করেন। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যঘাটতি ছিল প্রায় ৪৩০০ কোটি ডলার, যা বাণিজ্যঘাটতির তালিকায় ভারতকে ১১তম স্থানে রেখেছে। তুলনায়, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ছিল ১২১০০ কোটি ডলার। এ মাসের শুরুতে ট্রাম্প ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন। নয়াদিল্লিভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ অভিজিৎ দাস বলেন, ‘ট্রাম্পের মন্তব্য কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। এটা তার একটি কৌশল হতে পারে, যেমন তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে করেছিলেন। সেখানে তিনি প্রথমে ৩০ শতাংশ শুল্কের হুমকি দিয়েছিলেন, পরে তা ১৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছিলেন।’ বৃহস্পতিবার ভারতের রুপি ০.৪ শতাংশ পড়ে ৮৭.৭৩৭৫-এ নেমে আসে, যদিও পরে কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়। এনএসই নিফটি ৫০ সূচক ০.৫ শতাংশ কমে। কৃষি ও দুগ্ধ খাতে মার্কিন দাবি মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারত সতর্ক রয়েছে, কারণ এটি দেশের রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার সঙ্গে জড়িত। সাবেক বাণিজ্য সচিব অজয় দুয়া বলেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণে জ্বালানি কিনতে পারবে না বা বড় বিনিয়োগের সম্ভাবনাও নেই। তাই, আলোচনায় আরও নমনীয় হতে হবে। ভারত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার আগ্রহ দেখায়নি, তবে দেশীয়ভাবে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি তৈরি ও নকশায় আগ্রহী।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য দুই দেশের সম্পর্ক আরও জটিল করতে পারে। তিনি দাবি করেছিলেন, তার বাণিজ্য চুক্তির চাপের কারণেই মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের চার দিনের সংঘাত থামে, যা ভারত অস্বীকার করে। ফেব্রুয়ারিতে মোদি ট্রাম্পকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যেখানে কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার নেতারা উপস্থিত থাকতে পারেন।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.