বাণিজ্যযুদ্ধে কোন দেশগুলো সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত? এক কথায় উত্তর: রপ্তানি-নির্ভর দেশ। চীন এই পরিস্থিতি অনেক আগেই আঁচ করেছিল, তাই এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তারা অভ্যন্তরীণ ভোগ বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে। জিডিপিতে পণ্য ও বাণিজ্যিক সেবা রপ্তানির হিস্যার দিক থেকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ নিচের সারিতে, ৩০তম স্থানে। ২০১০ সালের পর আমরা মাত্র এক ধাপ এগিয়েছি।
*ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ* অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি জিডিপির ১২.৫% ছিল। অর্থনীতির আকার বাড়লেও ২০১০ সালের পর এই অনুপাত কমেছে। বাণিজ্যিক সেবা রপ্তানি ০.৯% থেকে বেড়ে ১.২% হয়েছে, কিন্তু পণ্য রপ্তানি ১৩.৯% থেকে কমে ১১.৩% হয়েছে।
৯ জুলাই ২০২৫ ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের বিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে মাত্র তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাঠামোগত চুক্তি করতে পেরেছে; বাংলাদেশ পারেনি। ফলে গত সোমবার ট্রাম্প যেসব দেশের জন্য ৩৫% শুল্ক পুনর্নির্ধারণের চিঠি দিয়েছেন, বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
বিশেষ করে ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা হচ্ছে। তারা কেন চুক্তি করতে পারল, বাংলাদেশ কেন পারল না? ভিয়েতনাম বছরে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করে, যার ১১০ বিলিয়ন ডলার (৩০%) যুক্তরাষ্ট্রে যায়। বাংলাদেশের রপ্তানি মাত্র ৪৮ বিলিয়ন ডলার, যার ৮ বিলিয়ন ডলার (১৭%) যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ভিয়েতনামের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই তারা শূন্য শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের পণ্যে ২০% শুল্ক আরোপ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ভিয়েতনামের সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না, তবে রপ্তানি কমলে অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগবে।
*ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ* অনুযায়ী, ভিয়েতনামের জিডিপি রপ্তানির অনুপাত প্রায় ৯০%, অর্থাৎ তাদের অর্থনীতি রপ্তানি-নির্ভর। বাংলাদেশের জিডিপি রপ্তানির চেয়ে আমদানি ও সেবা খাতের ওপর বেশি নির্ভরশীল। তবে বাংলাদেশের সেবা রপ্তানি উন্নত পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশের চুক্তির জন্য তৎপরতা কম ছিল। ভিয়েতনাম আগে থেকেই সক্রিয় ছিল, কিন্তু বাংলাদেশ ২ এপ্রিল ২০২৫-এর পর তৎপর হয়, যা কূটনৈতিক ঘাটতি নির্দেশ করে।
রপ্তানি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর আদর্শ অবদান নির্ভর করে অর্থনৈতিক কাঠামো, উৎপাদন ক্ষমতা, এবং বৈচিত্র্যের ওপর। ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, চীনের মতো দেশ রপ্তানি-নির্ভর মডেলে সাফল্য পেয়েছে। তবে বৈদেশিক বাজারের ওপর অতিনির্ভরতা ঝুঁকিপূর্ণ, যেমন ২০০৮ সালের সংকটে চীনের রপ্তানি কমে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রপ্তানি-নির্ভর প্রবৃদ্ধির জন্য বৈচিত্র্য, প্রযুক্তি, অভ্যন্তরীণ বাজার উন্নয়ন, শ্রমিক অধিকার, এবং পরিবেশগত অঙ্গীকার প্রয়োজন।
**চীন কী করেছে**
২০০৮ সালের সংকটের পর চীন অভ্যন্তরীণ ভোগ ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করে, “দ্বৈত প্রবাহনীতি” গ্রহণ করে। এতে রপ্তানি ও বিনিয়োগের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও প্রযুক্তি প্রাধান্য পায়। কারণগুলো হলো: বৈশ্বিক বাজারের অনিশ্চয়তা, ৪০ কোটির বেশি মধ্যবিত্তের উত্থান, হুয়াওয়ে, আলিবাবার মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বিকাশ, এবং আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাস। তবে চ্যালেঞ্জ হলো গৃহস্থালির আয় বাড়ানো ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
**বাংলাদেশের করণীয়**
বাংলাদেশের রপ্তানি মূলত পোশাক-নির্ভর। চামড়াজাত পণ্যের সম্ভাবনা থাকলেও গুণগত সমস্যার কারণে তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অভ্যন্তরীণ বাজারের বৃদ্ধি রপ্তানির তাগিদ কমিয়েছে, ফলে মানোন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, রপ্তানি-নির্ভর প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অভ্যন্তরীণ বাজার ও ক্রয়ক্ষমতা সীমিত। রপ্তানি উৎপাদন বাড়ায়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। তবে একক খাতের নির্ভরতা ঝুঁকিপূর্ণ। সমন্বিত কৌশল—রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, স্থানীয় উৎপাদন, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি—সবচেয়ে কার্যকর।
Note For Readers:
The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules.
Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters.
The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.