Thursday, July 17, 2025

রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগের একটা ভার্সন গতকাল জনগণ দেখেছে: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “যারা রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, গতকাল রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ ও রিফাইন্ড মুজিববাদীদের একটা ভার্সন—এই দেশের জনগণ দেখেছে।”

বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুরে এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জনতা ব্যাংকের মোড়ে আয়োজিত পথসভায় তিনি এ কথা বলেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, “৫ আগস্ট আমরা মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের পরাস্ত করেছি। আমরা এখনো সময় দিচ্ছি, আইনিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে এসব সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হোক। না হলে আমরা অবিলম্বে গোপালগঞ্জে মার্চ করব, এবং এবার ফিরে আসার জন্য নয়, গোপালগঞ্জের মাটি ও জনগণকে মুক্ত করে ফিরব।” ‘প্রিয় ফরিদপুরবাসী’ সম্বোধন করে তিনি বলেন, “গতকাল আপনারা গোপালগঞ্জ যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। সারা বাংলাদেশ প্রস্তুত ছিল, এবং আমরা অবশ্যই যাব।” তিনি আরও বলেন, “আমরা গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষের পাশে আছি। সরকারের কাছে আহ্বান, গোপালগঞ্জের একজন সাধারণ মানুষকেও হেনস্তা করা যেন না হয়। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।” গোপালগঞ্জে গতকালের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্টরা গোপালগঞ্জকে তাদের আশ্রয়কেন্দ্র করেছে। আমরা গোপালগঞ্জের জনগণকে মুজিববাদ থেকে মুক্ত করব।” তিনি বলেন, “গতকাল চারজন বিচারবহির্ভূতভাবে মারা গেছে। আমরা ৫ আগস্টের পর বলেছিলাম, সন্ত্রাসীদের মানবাধিকারেও আমরা বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু গ্রেপ্তার হচ্ছে না, বরং ছাড়া পাচ্ছে। প্রশাসনের দুর্নীতিবাজদের বলছি, বিচারের দাবিতে আমরা রাজপথে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।” নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান থেকে এসেছি। আমাদের পথ মধ্যম পন্থা, কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সন্ত্রাসীরা যদি আমাদের দিকে আসে, আমরা গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে পিছপা হব না। লাঠি হাতে তুলে নিতে পিছপা হব না। গণ-অভ্যুত্থানে আমরা অস্ত্র হাতে তুলে নিতে প্রস্তুত ছিলাম। যাঁরা ভেবেছিলেন, এই জুলাই পদযাত্রা আক্রমণ করে থামিয়ে দেবেন, তাঁরা ভুলে গেছেন তারা কাদের সামনে দাঁড়িয়েছে। এই পদযাত্রা ৬৪ জেলায় না পৌঁছানো পর্যন্ত থামবে না।” তিনি আরও বলেন, “৩ আগস্টের মধ্যে ৬৪ জেলায় পদযাত্রা শেষ করে শহীদ মিনারে ইশতেহার ও জুলাই সনদ ঘোষণার জন্য জড়ো হব। যা কিছু হোক, এই পদযাত্রা থামবে না।” এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর উপস্থাপনায় পথসভায় সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। **মানুষ আওয়ামী লীগের রাজনীতি আর দেখতে চায় না: আখতার হোসেন** এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদের রাজনীতি আর দেখতে চায় না। কিন্তু ভারতের সেবাদাসরা চুপিসারে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখে। তারা বলে, আওয়ামী লীগ ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়। যে আওয়ামী লীগ ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে রাতের ভোটে ডামি নির্বাচন করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, তারা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে আর সুযোগ পেতে পারে না।” তিনি বলেন, “সুশীলতার মোড়কে যারা আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদ ফিরিয়ে আনতে চায়, তাদের হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষ সুশীলতার মোড়কেও ফ্যাসিস্ট মুজিববাদী মতাদর্শকে আর উচ্চারিত হতে দেবে না। এই বাংলাদেশ সব দলমত-নির্বিশেষে সব জনগণের হবে।” নাহিদ ইসলামসহ এনসিপির নেতারা খুলনা থেকে যশোর-মাগুরা হয়ে দুপুর ১টা ৩১ মিনিটে ফরিদপুর সার্কিট হাউসে পৌঁছান। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে সার্কিট হাউস থেকে পদযাত্রা শুরু হয়, ২টা ৩৪ মিনিটে সভাস্থলে পৌঁছায়। সভা শুরু হয় ২টা ৪২ মিনিটে এবং ৩টা ২১ মিনিটে শেষ হয়। এরপর তারা রাজবাড়ীর উদ্দেশে ফরিদপুর ত্যাগ করেন। পথসভায় কৌতূহলী সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ফরিদপুর সদরের কৈজুরি ইউনিয়নের আবদুল কাদের (৫৫) শহরে কাজে এসে নতুন নেতাদের দেখতে থেকে যান। ভাজনডাঙ্গার সিরাজ মিয়া (৫২) সকাল সাড়ে ১০টায় এসে বক্তৃতা শোনেন। পূর্ব খাবাসপুরের স্বপন মিয়া (৫৩) বলেন, “নতুন নেতারা কী বলেন, শুনতে এসেছি।”
পথসভা উপলক্ষে শহরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। সভাস্থল ও আশপাশে পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্য মোতায়েন ছিলেন। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদউজ্জামান বলেন, নিরাপত্তার জন্য ৪০০-এর বেশি পুলিশসহ সেনাবাহিনী, র‌্যাব, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়। সবাই ফরিদপুর পুলিশ লাইনস থেকে এসেছেন।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.