জালিয়াতি করেও ফের দরপত্রে মেডিকিট করপোরেশন
রাজধানীর সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে এমআরআই ও সিটিস্ক্যান যন্ত্র সরবরাহে দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেডিকিট করপোরেশনের বিরুদ্ধে। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, যন্ত্রের উৎপত্তি, উৎপাদন ও শিপমেন্ট একই দেশ থেকে হওয়ার কথা ছিল—জাপান, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া বা নরওয়ে। কিন্তু মেডিকিট সিঙ্গাপুর থেকে শিপমেন্ট করে এবং এই কারসাজি আড়াল করতে সিঙ্গাপুরের নাম মুছে ফেলা হয়।জিডি-১০ প্যাকেজের আওতায় এই জালিয়াতি ধরা পড়ে। প্রমাণ পাওয়ার পর মেডিকিটকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে তাদের অভিজ্ঞতা সনদ বাতিল করা হয়। কিন্তু তদন্ত কমিটি গঠন বা প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার মতো কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অবাক করা বিষয়, কয়েক মাসের মধ্যেই মেডিকিট নতুন পাঁচটি দরপত্রে (জিডি-১২এ, জিডি-১২বি, জিডি-১১বি, জিডি-১১সি, জিডি-১১ই) অংশ নেয়। হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, রোগ নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি সরবরাহে জালিয়াতি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তারা অভিযোগ করেন, কমিশনের লোভে মেডিকিটকে বারবার দরপত্রে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কালবেলার হাতে আসা নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই জিডি-১০ প্যাকেজে দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়। এর আগে ৬ মার্চ দরপত্র আহ্বান করা হয়, যাতে মেডিকিটসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেডিকিট ৩৭৯.৮ মিলিয়ন টাকায় কাজ পায়, যদিও তাদের এ ধরনের ভারী যন্ত্র সরবরাহের অভিজ্ঞতা ছিল না। তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক ফরহাদ হোসেন বলেন, সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেডিকিটকে কাজ দেওয়া হয়েছে। অন্য একটি দরপত্রে ওভারসিস মার্কেটিং করপোরেশন (ওএমসি) ৬২.৪ মিলিয়ন টাকায় কাজ পায়। ওএমসির বিরুদ্ধে করোনা মহামারির সময় ৫০০ মিলিয়ন টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন প্রকল্প পরিচালক মো. সিদ্দিকুর রহমান নিয়োগ পান। তিনি পুরোনো কেনাকাটার নথি যাচাই করে মেডিকিটের জালিয়াতি ধরেন। বর্তমান প্রকল্প পরিচালক মো. রফিকুল হক জানান, মেডিকিটের অভিজ্ঞতা সনদ বাতিল করা হয়েছে এবং বিপিপিএ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের একটি সিন্ডিকেট মেডিকিটকে নতুন প্যাকেজের কাজ পাইয়ে দিতে তৎপর। মেডিকিটের স্বত্বাধিকারী শামীম আশরাফীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।