ফেনী, ৮ জুলাই ২০২৫ - ফেনীতে ভারী বৃষ্টিপাত এবং ভারতের উজান থেকে আসা পানির কারণে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কমপক্ষে দশটি স্থান ভেঙে গেছে। এর ফলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, যার কারণে হাজারো মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেল থেকে বাঁধ ভাঙার কারণে লোকালয়ে পানি প্রবেশ শুরু হয়েছে। মুহুরী নদীর বাঁধে পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের মধ্যম ধনীকুন্ডা, নোয়াপুর, শালধর এলাকায় তিনটি, ফুলগাজী উপজেলার দেড়পাড়ায় দুটি, নাপিত কোনায় একটি এবং সিলোনিয়া নদীর মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম গদানগর, জঙ্গলঘোনা, উত্তর মনিপুর দাসপাড়া ও মেলাঘর কবরস্থানের পাশে চারটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শহরের একাডেমি এলাকার বাসিন্দা সানজিদা আক্তার বলেন, “গত বছর বন্যার পানিতে বাসার নিচ তলিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার শুধুমাত্র বৃষ্টির পানিতেই এমন পরিস্থিতি হয়েছে, যা আগে কখনো দেখিনি। কিছু জিনিসপত্র সরানো গেলেও খাবার ও পানীয় জল নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।”
পরশুরামের মনিপুর এলাকার বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম বলেন, “গত বছর বল্লামুখা বাঁধের একটি ভাঙন এখনো মেরামত করা হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে এমন হয়েছে। নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে না আনলে প্রতি বছর এমন ভোগান্তি হবে।”
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত পাঁচটি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। মাঠপর্যায়ে আমাদের কাজ চলছে।” তিনি আরও জানান, মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে, এবং উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগামী ২-৩ দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
টানা বর্ষণে ফেনী শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ডাক্তারপাড়া, শহীদ শহিদুল্লা কায়সার সড়ক, নাজির রোড, মিজান রোডসহ বিভিন্ন এলাকার নিচু সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। দোকানপাটে পানি ঢুকে মালপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বিকেল থেকে পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।