Thursday, July 17, 2025

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির ভিন্ন প্রস্তাব


বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের বিষয়ে একমত। তবে এই সরকারের কাঠামো এবং বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। প্রতিটি দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে আলাদা প্রস্তাব জমা দিয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রাথমিকভাবে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর এনসিসির প্রস্তাব বাতিল করা হয়, ফলে সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক রূপরেখাও বাতিল হয়ে যায়। **বিএনপির প্রস্তাব** গত রোববার বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি রূপরেখা জমা দেয়, যাতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য পাঁিটি বিকল্প প্রস্তাব করা হয়: ১. রাষ্ট্রপতি সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। ২. এভাবে সম্ভব না হলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হবে, যার সভাপতি হবেন রাষ্ট্রপতি, তবে তাঁর ভোটাধিকার থাকবে না। ৩. এটিও সম্ভব না হলে কমিটিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ দলের একজন প্রতিনিধি যুক্ত হবে, এবং রাষ্ট্রপতির ভোটাধিকার থাকবে। ৪. এটিও ব্যর্থ হলে কমিটিতে প্রধান বিরোধী দল ব্যতীত অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর প্রতিনিধি (যারা ন্যূনতম ৫% ভোট পেয়েছে) অন্তর্ভুক্ত হবে, এবং রাষ্ট্রপতির ভোটাধিকার থাকবে। ৫. সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়া যেতে পারে, তবে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে না রাখার বিষয়ে সব দল একমত। যদিও শেষ পন্থা হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে বিবেচনা করা যেতে পারে। **জামায়াতের প্রস্তাব** জামায়াতে ইসলামী সোমবার একাধিক রূপরেখা প্রস্তাব করে। তারা বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১২০ দিনের মধ্যে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করবে, প্রয়োজনে ৬০ দিন বাড়ানো যাবে। সংসদ ভেঙে গেলে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।
**প্রথম প্রস্তাব**: প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠিত হবে, যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি। কমিটি তিন দিনের মধ্যে সভা করে সরকারি দল/জোটের পাঁচজন, প্রধান বিরোধী দল/জোটের পাঁচজন এবং অন্যান্য বিরোধী দলের দুজন করে নির্দলীয় প্রার্থীর নাম থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।

- **দ্বিতীয় প্রস্তাব**: সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ থেকে ৩০ দিন আগে স্পিকারের তত্ত্বাবধানে একটি সংসদীয় কমিটি গঠিত হবে, যাতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, উপনেতা, প্রধান হুইপ, বিরোধীদলীয় উপনেতা, বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ এবং অন্যান্য বিরোধী দলের দুজন প্রতিনিধি থাকবেন। এই কমিটি আলোচনার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবে। ব্যর্থ হলে ১৩ জন নির্দলীয় প্রার্থীর মধ্য থেকে একজনকে বাছাই করবে।

- **তৃতীয় প্রস্তাব**: প্রথম দুটি পদ্ধতি ব্যর্থ হলে ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল করা হবে, তবে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়ার বিকল্প বাদ দেওয়া হবে।

**এনসিপির প্রস্তাব**
এনসিপি গত মে মাসে প্রস্তাব দেয় যে, সংসদ ভেঙে দেওয়ার অন্তত তিন সপ্তাহ আগে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সদস্যসংখ্যা দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে নির্ধারিত হবে, তবে ন্যূনতম ৫% ভোট প্রয়োজন।

- সরকারি দল, প্রধান বিরোধী দল এবং অন্যান্য বিরোধী দল তিনজন করে মোট নয়জন নির্দলীয় প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করবে, যা প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে।

- সর্বদলীয় কমিটি ৮-৩ ভোটে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে চূড়ান্ত করবে। ব্যর্থ হলে উচ্চকক্ষ ‘র‍্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং’ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবে।

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নতুন একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করে, কিন্তু তাতে ঐকমত্য হয়নি। আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.