বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের বিষয়ে একমত। তবে এই সরকারের কাঠামো এবং বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। প্রতিটি দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে আলাদা প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
**প্রথম প্রস্তাব**: প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠিত হবে, যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি। কমিটি তিন দিনের মধ্যে সভা করে সরকারি দল/জোটের পাঁচজন, প্রধান বিরোধী দল/জোটের পাঁচজন এবং অন্যান্য বিরোধী দলের দুজন করে নির্দলীয় প্রার্থীর নাম থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।
- **দ্বিতীয় প্রস্তাব**: সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ থেকে ৩০ দিন আগে স্পিকারের তত্ত্বাবধানে একটি সংসদীয় কমিটি গঠিত হবে, যাতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, উপনেতা, প্রধান হুইপ, বিরোধীদলীয় উপনেতা, বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ এবং অন্যান্য বিরোধী দলের দুজন প্রতিনিধি থাকবেন। এই কমিটি আলোচনার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবে। ব্যর্থ হলে ১৩ জন নির্দলীয় প্রার্থীর মধ্য থেকে একজনকে বাছাই করবে।
- **তৃতীয় প্রস্তাব**: প্রথম দুটি পদ্ধতি ব্যর্থ হলে ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল করা হবে, তবে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়ার বিকল্প বাদ দেওয়া হবে।
এনসিপি গত মে মাসে প্রস্তাব দেয় যে, সংসদ ভেঙে দেওয়ার অন্তত তিন সপ্তাহ আগে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সদস্যসংখ্যা দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে নির্ধারিত হবে, তবে ন্যূনতম ৫% ভোট প্রয়োজন।
- সরকারি দল, প্রধান বিরোধী দল এবং অন্যান্য বিরোধী দল তিনজন করে মোট নয়জন নির্দলীয় প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করবে, যা প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে।
- সর্বদলীয় কমিটি ৮-৩ ভোটে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে চূড়ান্ত করবে। ব্যর্থ হলে উচ্চকক্ষ ‘র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং’ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবে।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নতুন একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করে, কিন্তু তাতে ঐকমত্য হয়নি। আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।