কলকাতা, ১২ জুন ২০২৫ – বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহাসিক পৈতৃক কাছারিবাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা এক চিঠিতে তিনি এই ঘটনাকে “বিস্ময়কর ও দুর্ভাগ্যজনক” বলে অভিহিত করেছেন এবং মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কথা বলে দোষীদের বিচার নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক স্থান, যেখানে রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের বহু সময় কাটিয়েছিলেন এবং অসংখ্য অমর সাহিত্যকর্ম রচনা করেছিলেন। মমতা তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, “যা ভাঙা হয়েছে, তা শুধু একটি বাড়ি নয়, সৃজনশীলতার ঝর্ণা।” তিনি এই ঘটনাকে বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উপর আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যিনি স্বদেশী আন্দোলনের সময় বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১০ জুন) একদল উন্মত্ত জনতা কাছারিবাড়িতে প্রবেশ করে আসবাব, জানালা এবং অডিটোরিয়ামে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এই ঘটনার সূত্রপাত হয় একজন দর্শনার্থীর সঙ্গে নিরাপত্তা কর্মীদের পার্কিং টোকেন নিয়ে বচসা থেকে, যা পরে সহিংসতায় রূপ নেয়। একজন কর্মীকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মমতা তাঁর চিঠিতে বলেছেন, “এটি রবীন্দ্রনাথের উত্তরসূরিদের উপর হামলা এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি অপমান।”
মুখ্যমন্ত্রী মোদিকে কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, “এই জঘন্য কাজের জন্য দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিবেশী দেশের সরকারের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমি আপনাকে অনুরোধ করছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ প্রয়োজন।” তিনি আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে রবীন্দ্রনাথ কেবল বাংলার নন, তিনি বিশ্বব্যাপী সম্মানিত।
এই ঘটনা ভারত ও বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দর্শনার্থী প্রবেশে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত সমালোচনার মুখে পড়েছে। তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং শাহজাদপুর থানায় ১০-১২ জনের নামে এবং ৫০-৬০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই ঘটনা দুই দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূচনা করেছে।
এ.আই/এম.আর