ঢাকা, ৫ জুন ২০২৫: বাংলাদেশের চামড়া শিল্প বর্তমানে গভীর সংকটের মুখোমুখি। আসন্ন কোরবানি ঈদে চামড়া কেনার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা না পাওয়া, দাম কমে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চীনা ক্রেতাদের শুল্কের চাপ এই খাতের উপর ভারী প্রভাব ফেলছে। শিল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, হাজারীবাগে যে চামড়া একসময় ১.৪০ ডলারে বিক্রি হতো, তা এখন মাত্র ০.৪৫ ডলারে নেমে এসেছে। প্রায় ৮ লাখ স্কয়ার ফুট চামড়া শিপমেন্টের অপেক্ষায় পড়ে আছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান বলেন, “গত বছর ৭২ সেন্টে বিক্রি হওয়া চামড়া এ বছর ৪৫ সেন্টে নেমেছে। দেশের ফুটওয়্যার বাজারের ৯০ শতাংশই আমদানিনির্ভর, আমাদের দখল খুবই কম।” তিনি সরকারের নীতিমালায় পরিবর্তন না আনলে এই খাতের ভবিষ্যৎ আরও মন্দ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
সিইটিপি ও এলডব্লিউজি সার্টিফিকেশন: এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সার্টিফিকেশন অর্জনকে গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে দেখছেন শিল্প-নেতৃবৃন্দ। এজন্য কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন জরুরি। ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কোম্পানির এমডি গোলাম শাহনেওয়াজ জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে মার্চ থেকে ১৫ মাস মেয়াদি একটি প্রকল্প শুরু হয়েছে, যা সিইটিপি’র সক্ষমতা যাচাই ও মানোন্নয়নে কাজ করছে। এছাড়া, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ১০ কোটি টাকার একটি সেইফ ল্যান্ডফিল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এলডব্লিউজি সনদের জন্য ১,৭১০ নম্বরের মধ্যে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ১৫০ নম্বর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লবণের দাম নিয়ে বিতর্ক: বিসিক লবণ সেলের প্রধান সরোয়ার হোসেন লবণের দাম বৃদ্ধির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “কক্সবাজারে লবণের দাম মণপ্রতি ৩০০ টাকা থেকে কমে ২৭০ টাকায় এসেছে। মিলে ১৩ টাকা কেজি দরে সরবরাহ করা হচ্ছে।”
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান: শিল্প-নেতৃবৃন্দ মনে করেন, সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই খাতের সংকট দীর্ঘতর হবে। সিইটিপি’র আধুনিকায়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি এবং এলডব্লিউজি সার্টিফিকেশন অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশের চামড়া শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে।
এ.আই/এম.আর