ঢাকা, ২১ মে ২০২৫ : মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন মানবিক খাতে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য নরওয়ের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (২০ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নরওয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি স্টিন রেনাতে হোহেইমের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি এই আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গাদের কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, “তারা প্রকৃত মানুষ, যাদের প্রকৃত স্বপ্ন আছে। অনেকে ৭ বা ১০ বছর বয়সে এসেছিল, এখন তারা কিশোর। তারা ক্যাম্পেই বড় হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন শিশু জন্ম নিচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে। তারা ফিরতে চায়, কিন্তু আটকে আছে। আমরা যেন তাদের ভুলে না যাই।”
হোহেইম এই মানবিক সংকটের গুরুত্ব স্বীকার করে বলেন, “এই সংকটে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশের ভূমিকার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা আমাদের সম্পর্ককে কেবল উন্নয়ন সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আরও বিস্তৃত ও গতিশীল অংশীদারত্বের দিকে এগিয়ে নিতে চাই।”
নরওয়ের স্টেট সেক্রেটারি বাংলাদেশের প্রতি তাদের অব্যাহত সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্টোরের পক্ষ থেকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, “আপনি নরওয়েতে সুপরিচিত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আপনাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। আপনাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব রয়েছে।”
ড. ইউনূস দুই দেশের গভীর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, “সংকটের সময় নরওয়ে সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিল। আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় আপনাদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না।”
হোহেইম বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতি নরওয়ের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “আপনার কাঁধে বড় দায়িত্ব, আর বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশাও অনেক।”
প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক সংকটের কথা তুলে ধরে বলেন, “জুলাইয়ের গণবিপ্লবে অনেক প্রাণহানি হয়েছে, আমাদের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকার বছরে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচারের সুযোগ করে দিয়েছে। ঋণগুলোকে উপহার হিসেবে বিবেচনা করা হতো, ফলে আমরা পাহাড়সম বকেয়া বিলের বোঝা পেয়েছি।”
তবে এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতি আস্থা বাড়ছে। সম্প্রতি বিডা সামিটে বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানিগুলো, যার মধ্যে নরওয়ের কিছু প্রতিষ্ঠানও ছিল, আমাদের সম্ভাবনায় বিশ্বাস রেখে এসেছে।”
বৈঠকে এসডিজি সমন্বয়কারী ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. মোশারফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এ.আই/এম.আর