ঢাকা, ২৮ মে ২০২৫ : জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে। এবার অতিরিক্ত বই ছাপার প্রবণতা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে সংস্থাটি, যার ফলে প্রায় ২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব হচ্ছে। এনসিটিবির তথ্যমতে, ২০২৬ সালে প্রায় ৪ কোটি বই কম ছাপানো হবে, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হ্রাস।
প্রতি বছর মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা অফিসারদের দেওয়া চাহিদার ভিত্তিতে বই ছাপানো হলেও, বাস্তব প্রয়োজনের তুলনায় ১৫-২০ শতাংশ বেশি চাহিদা জমা পড়ত। এই সমস্যা সমাধানে এনসিটিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়। গত জানুয়ারি থেকে দেশের প্রতিটি জেলার তথ্য যাচাই শুরু হয়। তিন স্তরের যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থী নিবন্ধন তথ্যের সঙ্গে চাহিদার মিল, এনসিটিবির অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ এবং ৩২টি ভ্রাম্যমাণ টিমের মাধ্যমে সরেজমিন যাচাই।
যাচাইকালে দেখা গেছে, গড়ে ২৫-৩০ শতাংশ বেশি চাহিদা জমা পড়ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় ৭৮,৮৫০টি অপ্রয়োজনীয় বইয়ের চাহিদা শনাক্ত করা হয়, যা আগের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কম। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তফা আলম জানান, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও সম্ভাব্য ক্ষয় বিবেচনায় ৫ শতাংশ অতিরিক্ত চাহিদা ধরা হলেও পূর্বের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পাওয়া গেছে।
এনসিটিবির সদস্য প্রফেসর রিয়াদ চৌধুরী জানান, অতিরিক্ত চাহিদা দেওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর মাঠ পর্যায় থেকে সঠিক তথ্য আসতে শুরু করেছে। ফলে ২০২৬ সালে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ২ কোটি ৪ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ৮ কোটি ৫২ লাখ এবং মাধ্যমিক স্তরে ১ কোটি ৯৫ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ২১ কোটি ৫৮ লাখ বই ছাপানো হচ্ছে। সর্বমোট ৩০ কোটি ১০ লাখ বই ছাপা হবে, যা গত বছরের ৪০ কোটি ১২ লাখের তুলনায় প্রায় ১০ কোটি কম।
নতুন কারিকুলাম বাতিল ও কিছু বিষয়ের বাধ্যতামূলক স্থান পরিবর্তনের কারণে দশম শ্রেণির ৫ কোটি ১৯ লাখ এবং ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ৪০ লাখ বই কম ছাপা হচ্ছে। এই উদ্যোগ শুধু অর্থ সাশ্রয়ই নয়, দীর্ঘদিনের অনিয়মের সংস্কৃতি ভাঙতেও সহায়ক হয়েছে।
এ.আই/এম.আর