ঢাকা, ২৬ মে ২০২৫: এনআরবিসি ব্যাংকে ২৩২ কোটি টাকার জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে চাকরিচ্যুত হওয়া মো. দেলোয়ার হোসেন তথ্য গোপন করে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে দুই বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিদর্শনে এ ঘটনা ধরা পড়ায় তাঁর নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কমার্স ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মো. দেলোয়ার হোসেন বর্তমানে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রধান শাখায় কর্মরত। এর আগে তিনি এনআরবিসি ব্যাংকের উত্তরা শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। সেখানে দায়িত্ব পালনকালে ২৩১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার ঋণ অনিয়ম ও আমদানি-রপ্তানিতে অবৈধ সুবিধা প্রদানের অভিযোগে তাঁর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। ২০২২ সালে এনআরবিসির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় এসব অভিযোগ ওঠায় তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়। তবে তিনি ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন, যা ব্যাংক গ্রহণ করেনি, কারণ জালিয়াতির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে প্রকাশ, দেলোয়ার হোসেন ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামার মাধ্যমে এনআরবিসি থেকে ছাড়পত্র ছাড়াই কমার্স ব্যাংকে যোগ দেন। তিনি দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেই এবং ছয় মাসের মধ্যে অব্যাহতিপত্র জমা দেবেন, যা তিনি দেননি। দুদক ২০২৩ সালের ১১ জুলাই তাঁর বিরুদ্ধে ৭৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করে, যা এখনও চলমান।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, এনআরবিসির উত্তরা শাখায় ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেলোয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মেসার্স বেক নিট নামে এক গ্রাহক ২০১৯ সালে ৮,৪১৯ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, কিন্তু চার মাসেও অর্থ দেশে না আনলেও ব্যাংক তা রিপোর্ট করেনি। বরং মেয়াদোত্তীর্ণ রপ্তানি বিল গোপন করে গ্রাহককে ৪ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকার নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। একইভাবে, আরও দুটি গার্মেন্টকে প্রায় ২ কোটি টাকার সহায়তা দেওয়া হয়।
কমার্স ব্যাংকেও দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ১১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা অনিয়মিত উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এজেন্ট কমিশন ও ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভাউচারবিহীন উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে। এসব লেনদেন সন্দেহজনক এবং মানি লন্ডারিংয়ের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
দেলোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, তিনি পরিচালকদের সুপারিশে ঋণ দিয়েছেন এবং তাঁর নাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়ানো হয়েছে। তিনি কমার্স ব্যাংকে ব্যয়ের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে তাঁকে ২২ মে মানবসম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এ.আই/এম.আর