সিলেট, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ – আগামী রবিবার সন্ধ্যায় সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্পেনের উদ্দেশে প্রথম কার্গো ফ্লাইট উড্ডয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে নতুন সম্ভবনার দুয়ার খুলছে। আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এই কার্গো টার্মিনাল ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওপর চাপ কমানোর পাশাপাশি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করবে। তবে আধুনিক প্যাকিং হাউসের অভাবে এখনই সিলেটের পচনশীল পণ্য, বিশেষ করে শাক-সবজি, রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না।
সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট শুরু, রপ্তানিতে নতুন দিগন্ত
১০০ টন ধারণক্ষমতার এই কার্গো টার্মিনাল ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের বাজারের জন্য প্রস্তুত। এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস)-সহ উন্নত প্রযুক্তি এবং আরএ-থ্রি প্রটোকল মেনে নির্মিত এটি ঢাকার পর দেশের দ্বিতীয় কার্গো টার্মিনাল। ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ায় এই টার্মিনাল রপ্তানি খাতে বিকল্প হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা দীর্ঘদিনের। তবে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা প্রটোকলের কারণে এতদিন রপ্তানির জন্য শুধু ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় অতিরিক্ত চাপের কারণে সিলেটের এই নতুন টার্মিনাল বিকল্প হিসেবে সামনে এসেছে। ২০২২ সালে কার্গো পরিবহনের জন্য উপযুক্ত স্বীকৃতি পেলেও তখন ঢাকায় চাপ কম থাকায় রপ্তানিকারকরা সিলেটের দিকে আসেননি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে।
বিমানবন্দর পরিচালক মোহাম্মদ হাফিজ আহমেদ জানান, ঢাকায় চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিলেটে কার্গো প্লেসমেন্ট শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “কার্গো ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়বে এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সিলেটের স্থানীয় পণ্য রপ্তানি সম্ভব হবে। প্যাকিং হাউস স্থাপিত হলে সিলেটের সবজি সরাসরি লন্ডনে পৌঁছাতে পারবে, যা প্রবাসীদের সঙ্গে দেশের বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করবে।”
তবে সিলেটের প্রধান রপ্তানি পণ্য শাক-সবজি, যা দ্রুত পচনশীল। এসব পণ্য রপ্তানির জন্য আরএ-থ্রি প্রটোকলের পাশাপাশি আধুনিক প্যাকিং হাউস প্রয়োজন। বর্তমানে দেশের একমাত্র সরকারি প্যাকিং হাউস ঢাকার শ্যামপুরে। ফলে সিলেটের পণ্য এখনই এই টার্মিনাল দিয়ে রপ্তানি করা সম্ভব নয়। বিমানবন্দর পরিচালক বলেন, “সিলেটে প্যাকিং হাউস স্থাপিত হলে এখানকার সবজি দ্রুত লন্ডনে পৌঁছে যাবে। প্রবাসীদের টেবিলে দেশের মাটির স্বাদ পৌঁছালে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে দেশের সংযোগ আরও গভীর হবে।”
রবিবারের উদ্বোধনী ফ্লাইটে উপস্থিত থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, সচিব নাসরীন জাহান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া এবং মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।
সিলেটের নতুন কার্গো টার্মিনাল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করলেও, প্যাকিং হাউসের মতো অবকাঠামোগত ঘাটতি দূর না হলে এর পূর্ণ সুফল পাওয়া সম্ভব হবে না। এই উদ্যোগ বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে নতুন গতি এবং বিশ্ব বাজারে দেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
এ.আই/এম.আর