বাংলাদেশ, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত, এখন জলদস্যুদের তৎপরতায় অপরাধের আখড়ায় পরিণত হচ্ছে। স্থানীয় সূত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বনের বিভিন্ন এলাকায় জলদস্যুরা একটি ‘ছায়া-প্রশাসন’ গড়ে তুলেছে। বনে প্রবেশ করতে হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্ধারিত ‘মাশুল’ দিতে হয়। না দিলে জিম্মি, নির্যাতন বা ছিনতাইয়ের শিকার হতে হচ্ছে জেলে ও বনজীবীদের।
গত ছয় মাসে সুন্দরবনে শতাধিক জেলে ও বাওয়ালিকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করেছে বিভিন্ন জলদস্যু দল। মুক্তিপণ হিসেবে প্রতি জনের জন্য ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়, যা বিকAsের মাধ্যমে পরিশোধের পরই অপহৃতরা মুক্তি পান। টাকা দিতে না পারলে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
খুলনার দাকোপের জেলে ফারুক হোসেন জানান, “মাছ ধরতে গিয়ে আমরা চারজন জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হই। গভীর বনে নিয়ে নির্যাতনের পর বিকাশে টাকা পেয়ে তারা আমাদের ছাড়ে।” শ্যামনগরের রবিউল শেখ বলেন, “ছয়জনকে একসঙ্গে ধরে নিয়ে যায়। একজনের টাকা দিতে দেরি হওয়ায় তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এখন সুন্দরবনে যাওয়ার সাহস পাই না।”
জেলেদের তথ্য অনুযায়ী, শরীফ বাহিনী, দয়াল বাহিনীসহ সাত-আটটি জলদস্যু গ্রুপ সক্রিয়, প্রতিটিতে ৮-১০ জন সশস্ত্র সদস্য রয়েছে। কোস্ট গার্ডের সাম্প্রতিক অভিযানে ১৯ জলদস্যু গ্রেপ্তার, ৩৭ জেলে উদ্ধার এবং ২৪টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ অস্ত্র উদ্ধার হলেও দস্যুতা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
কোস্ট গার্ডের (পশ্চিম জোন) জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসান বলেন, “জলদস্যুদের তৎপরতা বেড়েছে, তাই আমরা অভিযান জোরদার করেছি। সম্প্রতি ৩৩ জেলেকে উদ্ধার করেছি। সুন্দরবনে দস্যুতা কঠোরভাবে দমন করা হবে।” বন সংরক্ষক মো. ইমরান হোসেন জানান, “জলদস্যু দমনে বন বিভাগ একা নয়। কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী ও র্যাবের সহায়তায় একটি বিশেষ টিম গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করি, সুন্দরবন শিগগিরই নিরাপদ হবে।”
এ.আই/এম.আর