রাজবাড়ী: ২৬ এপ্রিল ২০২৫: রাজবাড়ীর পদ্মা নদীতে গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে নোঙর করা রয়েছে ইম্প্যাক্ট ‘জীবন তরী’ ভাসমান হাসপাতাল, যা নদীপাড়ের অসচ্ছল মানুষদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। এই হাসপাতাল এখন স্থানীয়দের জন্য ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেছে, যেখানে প্রতিদিন শতাধিক রোগী স্বল্প খরচে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শুরুতে রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও এখন প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। চোখের সার্জারি, নাক-কান-গলার চিকিৎসা, অর্থোপেডিক সমস্যা, এবং জন্মগত ত্রুটি যেমন ঠোঁটকাটা বা তালুকাটার অপারেশন এখানে করা হয়। মাত্র ৫০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি’তে চিকিৎসা শুরু করা যায়।
ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশন ১৯৯৯ সালে এই ভাসমান হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে।
গত ২৫ বছরে দেশের ৫০টি জেলায় এটি সেবা দিয়েছে। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি থেকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দর মৌলভীঘাটে রোগী দেখা শুরু করে হাসপাতালটি। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সেবা দেওয়া হয়, তবে রমজানে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল।
১২ শয্যার এই হাসপাতালে ৩০ জন কর্মী রয়েছেন, যার মধ্যে তিনজন মেডিকেল অফিসার, তিনজন নার্স, এবং সাতজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট। জরুরি রোগীদের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স সবসময় প্রস্তুত থাকে।
আকাশি-সাদা রঙের তিনতলা হাসপাতালটিতে ডাক্তারের চেম্বার, প্যাথলজি ল্যাব, এক্স-রে কক্ষ, অপারেশন থিয়েটার, এবং রোগীদের বেড রয়েছে। নদীর তীর থেকে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বালির বস্তা ও বাঁশের মাচা দিয়ে অস্থায়ী পথ তৈরি করা হয়েছে।
রোগীরা হাসপাতালের সেবা ও কর্মীদের আচরণের প্রশংসা করেছেন। গোলাম রাব্বানী তার বাবার চোখের চিকিৎসার জন্য এসে বলেন, “এখানে চিকিৎসকদের ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা খুব ভালো। মাত্র ৫০ টাকায় চিকিৎসা শুরু করেছি।” রোকসানা আক্তার জানান, তার চোখের সমস্যা অনেক উন্নত হয়েছে। শরীফুল ইসলামও বলেন, “পরিবেশ ভালো, চিকিৎসকরা যত্নসহকারে রোগী দেখেন।”
হাসপাতালের প্রশাসক এ কে এম শহিদুল হক জানান, চলতি মাসে ৮৫টি সার্জারি করা হয়েছে, এবং আগামীকাল ৪০ থেকে ৫০টি চোখের সার্জারি হবে। তিনি বলেন, “নদীতীরবর্তী দরিদ্র মানুষদের হাতের নাগালে আধুনিক চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।” হাসপাতালটি একেক এলাকায় দুই থেকে ছয় মাস সেবা দিয়ে থাকে।
এ.আই/এম.আর