ঢাকা, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ – বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) কক্সবাজার জেলার সব ইউনিয়নের ভোটার তালিকা থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চিহ্নিত করে বাদ দেওয়ার জন্য একটি কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। ভোটার তালিকায় অ-নাগরিকদের অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে উদ্বেগের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ইসির উপ-সচিব (সংস্থাপন) শাহ আলমের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি থেকে জানা গেছে, ইসির চতুর্থ কমিশন সভা ৩০ এপ্রিল সকাল ১০:৩০টায় অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে হাইকোর্টের রিট পিটিশন (নং ৪৬১৫/২০২৪) অনুযায়ী কক্সবাজারের ভোটার তালিকা যাচাইয়ের বিষয়ে আলোচনা হবে। এই যাচাইয়ের লক্ষ্য হলো তালিকায় কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থী অন্তর্ভুক্ত থাকলে তাদের বাদ দেওয়ার জন্য একটি কর্মপন্থা নির্ধারণ করা।
সম্প্রতি কক্সবাজারে ভোটার তালিকা হালনাগাদ পরিদর্শনের সময় সিইসি নাসির উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, কিছু ব্যক্তি “অসৎ উদ্দেশ্যে” ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, কিছু বাংলাদেশী নাগরিক ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার আশায় নিজেদের রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন, যা চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু কক্সবাজার নয়, বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রতিটি উপজেলাকে “বিশেষ এলাকা” হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় কঠোর নির্দেশিকার আলোকে ভোটার নিবন্ধন পরিচালিত হয়, যাতে অননুমোদিত ব্যক্তিরা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে। তবুও, কিছু রোহিঙ্গা এই তালিকায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। ইসি এর আগেও স্ব-উদ্যোগে রোহিঙ্গা শনাক্ত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছিল, কিন্তু সমস্যাটি এখনো অমীমাংসিত।
ইসির এই উদ্যোগ বাংলাদেশের ইলেক্টোরাল রোলস অ্যাক্ট ২০০৯-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে যে শুধুমাত্র বাংলাদেশী নাগরিকরাই ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে পারবেন। কমিশন সতর্ক করে দিয়েছে যে, রোহিঙ্গাসহ অ-নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে সহায়তা করা ইলেক্টোরাল রোলস অ্যাক্ট এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০-এর অধীনে দণ্ডনীয় অপরাধ।
আসন্ন বৈঠকে ভোটার তথ্যের সঙ্গে শরণার্থী শিবিরের রেকর্ড মিলিয়ে দেখা এবং কঠোর নথিপত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী যাচাই প্রক্রিয়ার রূপরেখা তৈরি করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপটি ২০২৫ সালের ডিসেম্বর বা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য ইসির প্রতিশ্রুতির অংশ।
এ.আই/এম.আর