সিলেট নগর ও জেলায় ৩৪টি স্থানে টিলা কাটার চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ টিলা ব্যক্তিমালিকানাধীন, বাকিগুলো সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত।
সিলেট সদরের খাদিমপাড়া ইউনিয়নের ছড়ারপাড় এলাকায় বসতঘরের আড়ালে টিলা কাটা হচ্ছে। গত সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা বেলচা ও কোদাল দিয়ে টিলার মাটি কেটে ট্রাক্টর-ট্রলিতে লোড করছেন। বোঝাই শেষে ট্রলি চলে যায়, এবং আরেকটি ট্রাক্টর এসে একইভাবে মাটি নেয়। ঘরগুলো আড়াল তৈরি করায় দূর থেকে এই কার্যক্রম বোঝা যায় না। নগর ও জেলার ৯টি স্থানে প্রকাশ্যে টিলা কাটার দৃশ্য দেখা গেছে, এবং সোম ও মঙ্গলবার আরও ২৫টি স্থানে কাটার চিহ্ন পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা ব্যক্তিমালিকানাধীন টিলা কাটা নিষিদ্ধ। ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর সদস্যসচিব আবদুল করিম চৌধুরী জানান, গত এক বছরে টিলা কাটার পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়েছে। আগে রাতে গোপনে কাটা হলেও এখন দিনের বেলা প্রকাশ্যে চলছে, কিন্তু প্রশাসন নীরব।
খাদিমপাড়া ইউনিয়নে, যেখানে ১০০টির বেশি ছোট-বড় টিলা রয়েছে, সবচেয়ে বেশি কাটা হচ্ছে। সোমবার উত্তর মোকামের গুল, মোকামের গুল, টিকরপাড়া, হজরত শাহ সুন্দর মাজার রোড, পিরেরচক, ছড়াগাং চা-বাগান, ছড়ারপাড় ও গোল্লায় ১০টি টিলা কাটা হচ্ছিল। খুনিরচক, দাসপাড়া, চকগ্রাম, দলইপাড়া, মলাই টিলা, জালালনগরসহ ১৫টি এলাকায়ও কাটা চলছে বলে স্থানীয়রা জানান। একজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন টিলার মালিকরা প্রভাবশালী চক্রকে টাকার বিনিময়ে কাটার দায়িত্ব দেন।
মোকামের গুলে “মামা খন্দকারের টিলা” নামে পরিচিত দেড় একরের একটি টিলা কয়েক মাস আগে অনেকটাই সাবাড় করা হয়েছে। বর্তমানে কাটা বন্ধ থাকলেও, চূড়ায় নালা তৈরির কারণে বৃষ্টিতে মাটি ক্ষয় হচ্ছে। মালিক খন্দকার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জৈন্তাপুরের গৌরী, সারিগুল, বনপাড়া, থুবাং, চান্দঘাট, শিখার খাঁ, উমনপুরে এবং নগরের কারিপাড়া, ব্রাহ্মণশাসন, দুসকি, হাওলাদারপাড়া, নালিয়া, ডলিয়া, আখালিয়া, মোহাম্মদীয়া, গোয়াবাড়ি, বড়গুল, মেজরটিলায় টিলা কাটা ও বসতঘর তৈরির চিত্র দেখা গেছে। গত ২০ আগস্ট গোয়াইনঘাটের রামনগরে একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন টিলা কাটা হচ্ছিল। বাহুবল, ওসমানী মুক্তিযোদ্ধা গ্রাম, বহর কলোনি, সিরাজনগর, সবুজনগর, উপজাতি কুলিবস্তি, ফাতেমানগর, জাহানপুর, সৈয়দপুর, চামেলীবাগ, বালুচরেও টিলা কাটা চলছে, যার বেশিরভাগ সরকারি খাস জমি।
িলেটে ভূমিধসে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জানায়, গত আড়াই দশকে ৩০% টিলা সাবাড় হয়েছে, এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে আরও ১৫% ধ্বংস হয়েছে। বর্তমানে ১০,০০০-১৫,০০০ পরিবার টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বাস করছে।[
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনূর রুবাইয়াৎ বলেন, কোনো টিলা কাটা যাবে না, এবং এ বিষয়ে অভিযান ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম জানান, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় কোনো ছাড় দেওয়া হবে না, এবং শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।
বেলা-র সমন্বয়কারী শাহ সাহেদা আক্তার বলেন, টিলা ধ্বংসের কার্যক্রম দ্রুত বেড়েছে, কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। পরিবেশ অধিদপ্তর গত এপ্রিলে জাহাঙ্গীরনগরে ছয়জন এবং জানুয়ারিতে কাঁঠালবাড়িতে ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তবে অভিযুক্তদের কেউ কেউ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
Note For Readers:
The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules.
Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters.
The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.