২০০৬ সালে পুলিশে নিয়োগবঞ্চিত ৩৩০ জন সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) ও সার্জেন্টের ভাগ্য এখনো প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ঝুলছে। ১৭ বছর ধরে তারা আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন। গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তারা আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের দাবি এখনো পূরণ হয়নি।[
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পরও ‘দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ’-এর অজুহাতে ২০০৭ সালে ৫৩৬ জন সাব-ইন্সপেক্টর ও ২২১ জন সার্জেন্টের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এই ৭৫৭ জন প্রার্থী শারীরিক যাচাই-বাছাই, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে রাজশাহী পুলিশ একাডেমি সারদায় প্রশিক্ষণের জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন। কিন্তু তৎকালীন আইজিপি নূর মোহাম্মদ ও পুলিশ সদর দপ্তরের সাবেক ডিআইজি (প্রশাসন) বেনজীর আহমেদের একক ও অবৈধ নির্দেশে তাদের নিয়োগ বাতিল করা হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। তারা নিয়োগ পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছেন। ওই সময় তারা উচ্চ আদালতে রিট করেও প্রতিকার পাননি।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ২০৭ জন এসআই (পুরুষ/নারী) ও ১২৩ জন সার্জেন্ট চাকরিতে যোগদানে আগ্রহী। গত বছর নভেম্বরে তাদের পুনর্বহালের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছয় সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে। নিয়োগবঞ্চিতরা কমিটির কাছে প্রয়োজনীয় সব দালিলিক তথ্য-উপাত্ত জমা দেন।
কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে গঠিত আরেকটি কমিটিও তাদের পক্ষে সুপারিশ করে। এরপর আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দপ্তরের সুপারিশের পর মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কমিটি তাদের নিয়োগ পুনর্বহালে সম্মতি দেয়। জ্যেষ্ঠতা, বয়স এবং প্রশিক্ষণকালীন প্রমার্জনার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। তবে চার মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি।
চলতি বছরের মে মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমিটির দ্বিতীয় সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে বলা হয়, আবেদনকারীদের আর্জি, আদেশ ও আদালতের পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনার মাধ্যমে তাদের একটি বিশেষ ব্যাচ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। অ্যাডহক ভিত্তিতে পদ তৈরির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও মেডিকেল বোর্ডে সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার শর্তে তাদের নিয়োগের সুপারিশ করা যায় কিনা, তা নিয়ে আইনি মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলে তাদের নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির জন্য আলাদা বিধিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হবে।
আইন মন্ত্রণালয় পরে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করে, উল্লেখ করে যে ১৯৯১ সালে একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের পর ১৯৯৭ সালে বিশেষ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় চাকরি ফেরত দেওয়া হয়েছিল। এই নজিরের আলোকে মানবিক কারণে অ্যাডহক ভিত্তিতে আলাদা পদ সৃজনের মাধ্যমে তাদের নিয়োগ ও চাকরি শেষে পদ বিলুপ্ত করা যায় কিনা, তা বিবেচনার সুপারিশ করা হয়।
নিয়োগবঞ্চিতদের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনকারী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি দলীয় বিবেচনার অজুহাতে অত্যন্ত অমানবিকভাবে আমাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। ১৮ বছর পর অন্তর্বর্তী সরকার মৌলিক ও মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে সব সেক্টরে নিয়োগবঞ্চিতদের পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয়।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনো জবাব পাচ্ছি না। আমাদের ব্যাচে এখনো ৪০ জন মেয়ে প্রার্থী রয়েছেন। বিভিন্ন ধর্ম ও গোত্রের লোকজন আছেন। আমরা কেবল ন্যায়বিচারের অধিকার ফিরে পেতে চাই।”
Note For Readers:
The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules.
Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters.
The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.