অর্থনীতি চাঙা করতে চাইলে দ্রুত নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করার তাগিদ দিয়েছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
শনিবার, (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বিএফডিসিতে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যাংক একীভূত নিয়ে ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, অর্থনীতি ও রাজনীতি একে অপরের পরিপূরক। দুর্বল শাসনব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি পরিচালনা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া সুষ্ঠু অর্থনীতি গড়া যায় না। স্বল্প মেয়াদি সরকার দীর্ঘদিন চলা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর; এতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে বাধা তৈরি হয়। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে দ্রুত নির্বাচন ও রাজনৈতিক সরকার অপরিহার্য বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, গত এক বছরে অর্থনীতির কিছু সূচক ধরে রাখা গেলেও সার্বিক সংকট কাটেনি, দারিদ্র্যও কমছে না। তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব ছিল। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, যা বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। ব্যাংকগুলোকে সম্পদ বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগও তোলেন তিনি।
এসময় তিনি আরো বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে, তা জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কিছু কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিকখাতের মাফিয়াদের অনৈতিক সুবিধা দিয়েছিল। তখন দেশে ছিল মাফিয়া ইকোনমির শাসন। চোখের সামনে ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ভালো ব্যাংক লুণ্ঠিত হয়েছে। আর্থিকখাতের মাফিয়ারা এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা কেবল আত্মসাতই করেনি, বিদেশেও পাচার করেছে। এর ফলে ব্যাংক গ্রাহকরা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কে রয়েছে। কখন তারা তাদের আমানতের টাকা ফেরত পাবেন তা এখনো অনিশ্চিত। অনেক আমানতকারী ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা চিকিৎসার খরচ মেটানোর জন্যও তুলতে পারছে না। এর মধ্যে অনেকে আবার মৃত্যুবরণও করেছে। আওয়ামী সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া ব্যাংকগুলোর মালিকরা কেবল অর্থ আত্মসাতই করেনি, ব্যাংকের স্থাবর—অস্থাবরসহ সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। বর্তমানে যে ৬ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে তা আদায় করা যাচ্ছে না। আর্থিকখাতের মাফিয়ারা যেসব সম্পত্তি মর্টগেজ রেখে ঋণ নিয়েছিল সম্পত্তিগুলো ঝামেলাপূর্ণ ও নিষ্কণ্টক না হওয়ায় নিলামে তুলে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার অনেক সময় এসব সম্পত্তি প্রভাবশালীদের হওয়ায় কেউ কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “ব্যাংক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে” শীর্ষক ছায়া সংসদে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকার বিতার্কিকগণ বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সিনিয়ার সাংবাদিক মাঈনুল আলম, প্রফেশনাল একাউন্টেন্ট আবুল বশির খান, সাংবাদিক মো: আলমগীর হোসেন ও সাংবাদিক রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।