Monday, July 28, 2025

রাজশাহীতে ১২৩ ‘চাঁদাবাজের’ তালিকা নিয়ে তোলপাড়, আছেন বিএনপি–জামায়াতের ৫০ জন

রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে গত কয়েক দিন ধরে ১২৩ জন কথিত চাঁদাবাজের নাম সংবলিত একটি তালিকা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তালিকায় বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম রয়েছে। এতে বিএনপি, ছাত্রদল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের ৪৪ জন, আওয়ামী লীগের ২৫ জন এবং জামায়াতের ৬ জনের নাম উল্লেখ আছে। বাকিদের নাম ও ঠিকানা দেওয়া হলেও তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই; তাদের সুবিধাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

তালিকার ১৮ জনের নাম সম্প্রতি এক আবাসন ব্যবসায়ীর দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় জড়িত। এই মামলায় ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাদের প্রধান আসামি করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে তারা সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

তালিকাটি পুলিশের নাকি অন্য কোনো সরকারি সংস্থার, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিএনপির এক নেতা সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তালিকাটি পুলিশ তৈরি করেছে এবং তিনি এতে পুলিশের স্বাক্ষর দেখেছেন। তবে জনসাধারণের হাতে ঘুরে বেড়ানো তালিকায় কোনো স্বাক্ষর নেই।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. গাজিউর রহমান সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তালিকা তৈরি করে। তিনি তালিকাটি দেখেননি, তাই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেন না। তবে তিনি মনে করেন, তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা যদি সত্যিই চাঁদাবাজ হয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, “গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আপনাদেরও উচিত পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা। এই অবস্থা বদলাতে জনগণ রাস্তায় নেমেছিল। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও চাঁদাবাজদের সমর্থন করে না।”
তালিকায় অভিযোগ করা হয়েছে, এক ছাত্রদল নেতা ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মামলার ভয় দেখিয়ে এবং কোচিং সেন্টার থেকে চাঁদাবাজি করেছেন। মহানগর বিএনপির এক যুগ্ম আহ্বায়কের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ এবং এক সদস্যের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানাধীন ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজি ও ভুবনমোহন পার্কে সাইকেল গ্যারেজ পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। জামায়াতের একজনকে ‘ক্যাডার’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তিনি ভূমি দখল, গণমাধ্যম ব্যক্তিদের হুমকি ও উন্নয়ন প্রকল্পে বাধা দিয়ে চাঁদা আদায় করেন। জামায়াতের বাকি নামধারীদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে, এবং একজনের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের অভিযোগ আনা হয়েছে। একজন ব্যক্তি, যিনি আগে আওয়ামী লীগে ছিলেন এবং এখন বিএনপি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে দেশীয় অস্ত্রধারী ক্যাডার হিসেবে রাতে রাস্তায় ও নির্মাণাধীন ভবন থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি তালিকা দেখে হতবাক। তিনি জানেন না কে বা কোন সংস্থা এটি তৈরি করেছে, তবে এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হচ্ছে। কিছু ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারেন, কিন্তু ঢালাওভাবে নাম দেওয়া অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, চাঁদাবাজদের শনাক্ত করতে ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নামে ঢালাও মামলার বাদীদের দেখতে হবে। তিনি প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কিছু কর্মকর্তা পূর্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলেও এখন ভালো মানুষের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। তিনি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মণ্ডল বলেন, তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের সংগঠন থেকে সম্পূর্ণ বয়কট করা হয়েছে। তবে কেউ কেউ সুযোগ পেলে ছবি তুলে প্রচার করতে পারে।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.